পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। কয়েকটি জেলার লাখো মানুষের জীবন এখন হুমকির মুখে। এ বন্যায় এখন পর্যন্ত ছয় জেলায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এদিকে ফেনীতে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে একজনের।
ভারতের বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে ব্যাপক। এমনকি ভারতবিরোধী স্লোগানও উঠেছে। সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেটিজেনরা পার্শ্ববর্তী দেশকেই দোষারোপ করছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে এ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করছেন। এবার দেশটির আগ্রাসন নিয়ে মুখ খুললেন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) দুপুর দুইটার দিকে ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজ থেকে লাইভে এসে কথা বলেন সালমান মুক্তাদির। শুরুতে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বছরের পর বুলিং করে আসছে ভারত। এ দেশ থেকে তাদের জামাই আদর দিয়ে স্বৈরশাসকরা বছরের পর বছর লালন করে রেখেছে তাদের। বাংলাদেশিদের কাছে একটি সত্য জানাতে চাই, বাংলাদেশে যত শপিংমল দেখেন, পণ্য দেখেন, ব্যবসা দেখেন, তার প্রায় সবকিছুই ভারতের। অনেক পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা।
এমনকি বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় ভারতীয় কারখানা রয়েছে। ভারতীয়রা বাংলাদেশে এসে চাকরিই করছে না, বছরের পর বছর ধরে চাকরি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আবার আমরা যে রেমিট্যান্স পেয়ে থাকি, তার বিশাল অংশ ক্যাশ করে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের টাকা সব ভারতে যাওয়ায় আর দেশে থাকছে না টাকা।
তিনি বলেন, এরপর মিডিয়া। ভারতের যে মিডিয়া, টিভি আমাদের টিটকারি করে, আমাদের বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তাদের প্রতিটি বিজ্ঞাপন এখনো আমাদের মিডিয়াতে চলছে। সবমিলে তাদের বেশ সুবিধাই দিচ্ছি আমরা।
এ অভিনেতা বলেন, ভারত সরকার তাদের মানুষদের ঠিকমত ট্রিট করে না। ওই দেশের সরকারের নির্যাতনে সেখানকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। একটি বাঁধ তৈরি করার জন্য ৬০-৭০ হাজার আদিবাসীকে ভিটেহারা করেছে ভারত সরকার। সেটি কোন বাঁধ. যা খোলার কারণে বাংলাদেশের মানুষ ডুবে মরছে। হয়তো আরও অনেক মানুষ মরবে। ৪৮ বছর পর এভাবে বাঁধ খুলে দিয়েছে ভারত। তারা জেনে-শুনে ইচ্ছা করেই কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়া খুলে দিয়েছে বাঁধটি। এ কারণে আমরা না কোনো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি, না উদ্ধার করতে পেরেছি। ভারতীয় সরকারকে বোঝা উচিত, বাংলাদেশেরও জানা উচিত যে―কারও পুতুল নয় আমরা।
এছাড়া ভারতকে উপহার দেয়া প্রসঙ্গে সালমান বলেন, এবার আসি আমি যে গিফটি দেয়ার কথা বলেছিলাম, সেটি অবশ্য আমি একা করতে পারব না, তবে তা খুবই সিম্পল। অন্তত এক মাসের জন্য, যদি ন্যূনতম লজ্জা থাকে আমাদের, আসলেই যদি কিছু করতে চাই আমরা, তাহলে ভারতীয় সব পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে যত ক্যাবল অপারেটররা আছেন, যারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তাদের বলতে হবে আপনারা ভারতীয় কোনো চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না। প্রচার যদি করতেই হয়, তাহলে ভারতীয় বিজ্ঞাপন থেকে হওয়া আয় টাকা বন্যার্তদের ফান্ডিংয়ের জন্য দিতে হবে। কেননা, আজ ভারতীয়দের জন্য আমাদের এই অবস্থা। ভারতের প্রতিটি পণ্য, যা আছে, সব অন্তত এক মাসের জন্য বন্ধ রেখে বোঝাতে হবে কারও পুতুল না আমরা। কারও ওপর নির্ভরশীল নয় আমরা, শুধু নিজের পায়ে দাঁড়াব আমরা।
এছাড়া সবশেষ তিনি বলেন, এই যে বন্যা নিয়ে আলোচনার আগে ভারত নিয়ে কথা বলছি, কারণ প্রতিবার যখন বন্যা হবে, খারাপ সময় আসবে, তখন কী শুধু তারকারা এসেই ভিডিও করবে, ফান্ড করবে, তারপর রেসকিউতে কী যাবে? আমরা সবাই, আর্টিস্ট, সরকার, প্রতিটি মানুষ ভারতীয় পণ্য থেকে বিরত থাকব, এভাবেই উপহার দেব ভারতকে; শুধু এটা বোঝাতে যে আমরা ভারতের পুতুল না।
এদিকে সালমান মুক্তাদিরের এই ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তার আলোচনা যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনই প্রশংসাও করছেন নেটিজেনরা। মন্তব্যের ঘরে সবাই নিজ নিজ মতামত জানানোর পাশাপাশি অন্যকে জানার সুবিধার্ধে শেয়ার করছেন ভিডিওটি।
প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম নয়, এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় হামলা ও গুলি বর্ষণ এবং গুলিতে শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়েও কথা বলেছিলেন সালমান। এমনকি রাজপথে নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন আন্দোলনে। ফলে মডেল ও অভিনেতার বাইরে এসব কর্মকাণ্ডে সক্রিয়তার জন্য বেশ প্রশংসিত হয়ে আসছেন এ তারকা।
Leave a Reply