বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে ও ভেতরে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে আনসার বাহিনীর সদস্যদের আন্দোলন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করা এবং প্রথমে শিক্ষার্থীদের মারধর ও পরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সদ্য দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও তাদের কাজকর্ম ঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যেই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় সরকার ও দেশবাসী যখন বন্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত তখন দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করায় আনসার বাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে গোটা দেশবাসী। বিশেষ করে, রোববার বিকালের মধ্যেই যখন তাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়া হয় তখন আর আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকে না। কিন্তু তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও সেনাসদস্যদের ওপর হামলা চালানোয় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেকে বাহিনীর বিলুপ্তি দাবি করেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি বিদায় নেওয়া ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের দোসর হয়ে তারা কাজ করছে।
জানা যায়, গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর আনসার সদস্যদের হামলা এবং পরবর্তীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী মিলে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমও রয়েছেন। এদিন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এদিন সরকার অন্যান্য দাবি মেনে নিলেও চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অনড় থাকেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েক হাজার আনসার সদস্য চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেন। বিকালের দিকে তারা সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পর আনসারের নেতৃত্বের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বৈঠক করে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে দেন। তারপরও আনসার সদস্যরা প্রজ্ঞাপনের দাবিতে অনড় থেকে সচিবালয়ের গেট অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় মুখী একটি ত্রাণের গাড়িও আটকে দেয়।
এক পর্যায়ে রাত ৮টার দিকে সচিবালয় উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের অবরুদ্ধ করে রাখার খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে আসলে আনসার সদস্যরা ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এ সময় গুলির ঘটনাও ঘটে। পরে ছাত্ররা শিক্ষা ভবনের দিকে সরে গিয়ে আনসার সদস্যদের স্থান ত্যাগ করার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু তারা স্থান ত্যাগ না করে উল্টা ছাত্রদের উপরে চড়াও হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ছাত্ররা একত্রিত হয়ে আনসারদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে জিরো পয়েন্টের দিকে সরে যায় এবং সেখানে আবার তারা সংঘটিত হয়ে ছাত্রদেরকে ধাওয়া করে।
এতে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে বাঁশের লাঠি ও স্ট্যাম্প দেখা যায়। এ ঘটনায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা চারিদিক থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে অভিমুখে রওনা হলে আনসার সদস্যরা পালিয়ে যায় তখন সচিবালয় থেকে অবরুদ্ধ কর্মকর্তা কর্মচারীরা বের হয়ে আসতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি যুগান্তরকে বলেন, সমন্বয়কদের সচিবালয়ে আনসাররা আটকে রেখেছে- এমন খবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিল। শিক্ষাভবন পার হওয়ার পরেই আনসারদের দিক থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে মিছিলের সামনের দিকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিক আহত হয়। ছাত্ররা তখন পিছনের দিকে চলে আসে এবং আনসারদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। কিন্ত আনসাররা ছাত্রদের দিকে আক্রমণ করতেই থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রদের উপর গুলিও ছোড়ে। এই সময়ে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে। পরবর্তীতে ছাত্ররা ধাওয়া দিলে আনসাররা পল্টনের দিকে পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসারের একটি সূত্র জানায়, ১৯ সমন্বয়কের নেতৃত্বে আনসার সদস্যরা আন্দোলন করছে। এদের মধ্যে প্রধান সমন্বয়ক নাসির সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করে এক সপ্তাহ সময়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিলে কিছু বিশৃঙ্খল আনসার সদস্য উত্তেজিত হয়ে তর্ক শুরু করে এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টার ঘটনা ঘটে। অথচ তিন বছরের চুক্তিভিত্তিক হিসেবেই তারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে।
এদিকে আজ সোমবার সচিবালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। দেখা মিলেনি আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের কাউকে।
Leave a Reply