সবাই একসাথে ব্যাংক থেকে টাকা না তুলে যেটুকু না তুললেই নয় সেটুকুই তোলার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে গ্রাহকদের উদ্দেশে সতর্ক ও সহনশীল হওয়ার পরামর্শমূলক বার্তা দেন গভর্নর।
একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তাহলে কেউ টাকা পাবেন না, বলেন তিনি।
গ্রাহকদের উদ্দেশে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গ্রাহকদের বলব, ধৈর্য ধরেন। একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তাহলে কেউ টাকা দিতে পারবে না। অনেকে অতিরিক্ত সুদের লোভে এসব ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এখন অধৈর্য হলে হবে না। আমানতের টাকা লোকসান হোক, এটা আমরা চাই না। আমরা টাকা ছাপিয়ে কোনো আমানতের টাকা দেব না। কারণ, সেটা জাতির জন্য ভালো হবে না। তখন মূল্যস্ফীতি ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে। যেটুকু টাকা না তুললে নয়, সেটা তোলেন। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর অবস্থার পরিবর্তন হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর মনসুর বলেন, পৃথিবীর যে কোনো দেশের ব্যাংকে সব গ্রাহক যদি একসাথে টাকা তুলতে যায়, তাইলে ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা দিতে পারবে না।
বিদ্যমান সংকটকালীন মুহূর্তে আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে আহসান মনসুর বলেন, আমানতকারীদের টাকার ক্ষতি হোক আমরা চাই না। এসব দুর্বল ব্যাংক, তা আগে আপনারা জেনেছেন; তারপরও টাকা রেখেছেন।
ধৈর্য ধরলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক হবে বলে আশা দেখিয়ে গভর্নর বলেন, আমি বলব না ব্যাংক খাতের ওপর এখনই আস্থা রাখতে হবে। আস্থা থাকুক আর না থাকুক ধৈর্য ধরতে হবে। সবাই মিলে টাকা উত্তোলন করতে যাবেন না। যেটুকু না তুললেই নয় সেটুকুই টাকা তুলুন। ছয় মাস কিংবা এক বছর পর আস্তে আস্তে দেখি স্বাভাবিক হয় কি না। আস্তে আস্তে ঠিক হবে। সেটার জন্য সময় দিতে হবে।
গভর্নর আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো আমানতকারী টাকা হারায়নি। ব্যাংকে আগে সুশাসন ফেরাতে হবে, যাতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসে। এ জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলারের দর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এমন পর্যায়ে থাকলে আগামী ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে; যদিও বন্যা একটু দুশ্চিন্তা তৈরি করছে। তা–ও আশাবাদী; দু-এক মাস বেশি লাগতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে এখন ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। তাই রিজার্ভ কমার সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে রিজার্ভ আরও বাড়বে। সরকারের চাহিদা (ডলার) আন্তব্যাংক মার্কেট থেকে মেটানো হচ্ছে।
ব্যাংক খাত সংস্কার নিয়ে গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে সেটা করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেখানে যুক্ত থাকবে। মাসখানেকের মধ্যে এটা করা হবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞ নেওয়া হবে। শ্রীলঙ্কা কীভাবে সংস্কার করেছে, সেটাও দেখা হবে। এখন কার্যপ্রনালি ঠিক করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সামনে বিষয়টি ঠিক করা হবে।
ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের নতুন বোর্ডকে কর্মপরিকল্পনা দিতে বলেছি। এখানে কাজ করতে হবে, বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। তারা সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে বোর্ড আবার পরিবর্তন করা হবে। সবাইকে নজরদারি করা হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply