‘ঢাকার সবচেয়ে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (সাবেক শেরাটন হোটেল) ভেতরেও ছিল ‘আয়না ঘর’। সেখানে নির্যাতন করে কর্মচারীদের চাকরি থেকে ইস্তফার চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হতো।’
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে হোটেলটির চাকরিচ্যুতরা এ অভিযোগ করেন।
চাকরিচ্যুতদের পক্ষে নূরুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ছিল আয়নাঘর। সেখানে কর্মচারীদের নির্যাতন করে চাকরি থেকে ইস্তফার চিঠিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হতো। অনেককে নির্যাতনের পর ডিবির হাতে তুলে দেওয়া হতো। কোনো কর্মচারী ন্যায্য পাওনা চাইলেই নেমে আসত নির্যাতনের খড়গ। কোনো কোনো কর্মচারী তিন-চার মাস থেকে বেতন ভাতা পাচ্ছিলেন না। হোটেলটির দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক ব্লকে ওই নির্যাতন কক্ষ বা আয়নাঘর রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি, জিএম, এইচআর ডিরেক্টরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কর্মচারীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় স্বাধীনতা পাওয়ার পর ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য ছাত্র-সমাজকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে গত ২৮ আগস্ট আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু তারা (হোটেল কর্তৃপক্ষ) আমাকে মারধর করার জন্য খুঁজতে থাকে। আমাকে না পেয়ে রাতেই কোনো এক থানায় গিয়ে উপঢৌকন দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করতে বলে।
ওইদিন ভোর ৪টায় ডিবি আমাকে তুলে নিয়ে যায় এবং রমনা থানার ওসি আমাকে চাপ দিতে থাকেন আমি যেন এই আন্দোলন থেকে সরে যাই। আমি এটি না করায় আমাকে গুম করে রাখেন ওসি। যা আগের ফ্যাসিবাদি পুলিশ করত। কিন্তু স্বৈরাচার পতনের পরও এই ফ্যাসিবাদ পুলিশ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করে রাখে এবং পরিবারকে কোনো তথ্য দেয় না।’
নূরুজ্জামান বলেন, ‘পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্র-সমাজ এবং সহকর্মীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, আমাকে ডিবি উঠিয়ে নিয়ে যায়। যা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। শুধু তাই নয়; রমনা থানার ওসি ছাত্র-সমাজ ও সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং অশালীন ভাষায় কথা বলেন। এমনকি আমার স্ত্রীর সঙ্গেও অশালীন-অসদচারণ করেন এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। যেন আমি আর কোনো আন্দোলন না করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডিবি কার্যালয় এবং ওসির দায়িত্বশীল আচরণ না করায় ছাত্র-জনতা ও সহকর্মীদের রমনা মডেল থানা এবং ডিবি কার্যালয়ে ছোটাছুটি করতে হয়। কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য প্রকাশ করে না। পরবর্তীতে চাপপ্রয়োগ করার পর আমার অবস্থান শনাক্ত করা যায়। কিন্তু থানা ও ডিবি কার্যালয় কেউ দায় স্বীকার করে না।
আমাদের প্রশ্ন কোন অভিযোগে, কার নির্দেশে আমাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়? সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও ডিবি কার্যালয় ও থানা আমাকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এবং গড়িমসি করে। পরে সহকর্মীদের ন্যায়সঙ্গত চাপে আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এখন প্রশ্ন জাগে, এটা কোন দেশ? যে দেশ আমরা স্বৈরাচারমুক্ত করেছি? কী ব্যবহার পাচ্ছি সরকারি অফিস থেকে? আজ আমাদের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে যায়।’
Leave a Reply