বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে বাংলাদেশের ওপর। এর মধ্যে মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। এতে যেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তেমনি প্রাণহানিও কম হয়নি। মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম (এটুআই)।
‘বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়: ঐতিহাসিক ওভারভিউ এবং প্রভাব (মে ১৯৪১-২০২২)’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে মে মাসে দেশে আঘাত হানা বড় ঘূর্ণিঝড়ের একটি কালানুক্রমিক বিবরণ তুলে ধরা হয়।
এটুআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে মে মাসে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের কালানুক্রমিক বর্ণনা–
১৯৪১ ঘূর্ণিঝড়
১৯৪১ সালের মে মাসে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিল মেঘনা নদীর পূর্ব মোহনা। এই ঘূর্ণিঝড়ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও অজানা।
১৯৪৮ ঘূর্ণিঝড়
১৯৪৮ সালের ৭ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিল চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মধ্যবর্তী ব-দ্বীপ। প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ ও ২০ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে।
১৯৫৮ ঘূর্ণিঝড়
১৯৫৮ সালের ১৬ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলা ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান ছিল পূর্ব বরিশাল ও নোয়াখালী, মেঘনা নদীর মোহনা। এই দুর্যোগে ওসব এলাকার ৮৭০ জনের প্রাণহানি, ১ হাজার ৪৫০টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছিল। নষ্ট হয়েছিল মাঠের ফসল।
১৯৬১ ঘূর্ণিঝড়
১৯৬১ সালে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল প্রতি ঘণ্টা ১৬১ কিমি। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল ২৫ হাজার গবাদি পশুর।
১৯৬৩ ঘূর্ণিঝড়
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বয়ে গিয়েছিল ২৮ ও ২৯ মে। সে সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল প্রতি ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২০৩ কিমি ও কক্সবাজারে ১৬৪ কিমি। জোয়ারের স্তর ছিল ৪.৩-৫.২ মিটার। প্রাণহানি হয়েছিল ১১ হাজার ৫২০ জনের।
১৯৬৫ ঘূর্ণিঝড়
১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড় বরিশাল ও বাকেরগঞ্জ এলাকায় আঘাত করেছিল ১১ ও ১২ মে। এই ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের সর্বোচ্চ গাতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬২ কিমি.। জোয়ারের স্তর ছিল ৩.৭ মিটার। ১৯ হাজার ২৭৯ জনের প্রাণহানি হয়েছিল এ ঝড়ে।
১৯৭৫ ঘূর্ণিঝড়
১৯৭৫ সালে ভোলা, কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল ৯ থেকে ১২ মে। যার বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৯৬ দশমিক ৫ থেকে ১১২ দশমিক ৬ কিমি.। এই ঘূর্ণিঝড়ে ৫ জন মারা গিয়েছিল।
উরিচর সাইক্লোন
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯৮৫ সাইক্লোন (উরিচর সাইক্লোন) আঘাত হেনেছিল ২৪ ও ২৫ মে। যার বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৫৪ কিমি, সন্দ্বীপে ১৪০ কিমি ও কক্সবাজারে ১০০ কিমি। উপকূলের ১১ হাজার ৬৯ জন বাসিন্দা প্রাণ হারান। ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি গবাদি পশু মারা যায়। সেই সময় আনুমানিক ৯৫ হাজার ঘরবাড়ি, ৭৪ কিলোমিটার রাস্তা এবং বাঁধ ধ্বংস হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় নার্গিস
ঘূর্ণিঝড় নার্গিস ২০০৮ সালের ৩ মে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানে। এ সময় বাংলাদেশে খুব একটা প্রভাব পড়েনি।
ঘূর্ণিঝড় আইলা
২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত করেছিল পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায়। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৯০ কিমি.। বাংলাদেশে ১৯৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে ২০১৩ সালের ১৬ মে। এতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হেনেছিল ২০১৬ সালের ২১ মে। এতে চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু হয়। ৪-৫ ফুট উঁচু ঝড়ের ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লক্ষাধিক পরিবার।
ঘূর্ণিঝড় মোরা
ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল এলাকায় আঘাত করে ২০১৭ সালের ৩০ মে। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতি ছিল ১১০ কিমি.। মোরার প্রভাবে উপকূলে মারাত্মক ক্ষতি হয়।
ঘূর্ণিঝড় ফণী
২০১৯ সালের ২ ও ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাণ হারান ৯ জন। ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে এবং পরে কলকাতা ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যায়।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান
২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্ফান বাংলাদেশে আঘাত হানে ২০ মে। এতে উল্লেখযোগ্য ধ্বংস এবং প্রাণহানি ঘটে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
২০২১ সালের ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।
ঘূর্ণিঝড় আসানি
২০২২ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে প্রাথমিকভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভাবিত হয়েছে। বাংলাদেশে কম ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা
২০২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূলে আঘাত হানে। এতে বাংলাদেশে কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষক্ষতি হয়।
এদিকে বাংলাদেশে এবার আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’। এটি রোববার মধ্যরাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে আঘাত হানতে শুরু করতে পারে।
Leave a Reply