সাম্প্রতিক অতীতের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে বিপ্লবকে সাফল্যমন্ডিত করেছে। শুধু তাই নয় সংগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তাপ্রদান তথা দেশের বিরাজমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সারাদেশে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ডেপ্লয়েড অবস্থায় আছে। এমতাবস্থায় তাদের কার্যক্রমে ছাত্ররা তথা সাধারণ জনগণ সহায়তা করবে সেটাই সর্বোতভাবে কাম্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, কিছু সংখ্যক ছাত্র তথা ছাত্রবেশী যুবকেরা সেনাবাহিনী তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করার পরিবর্তে তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করছে এবং তাদের সঙ্গে অবমাননাকর আচরণ করছে। বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এগুলো সেনাসদস্যদের মনোবলকে ক্ষুন্ন করছে। যথাবিহিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ ও ছাত্রদের প্রেষণা প্রদান না করা হলে সার্বিকভাবে এ ধরনের ঘটনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমকে ব্যহত করবে।
নিম্নে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলো:
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে আজিমপুর সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সৈনিকদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী অসৌজন্যমূলক আচরণ করাসহ মারামারিতে লিপ্ত হয়।
জানা যায়, ছাত্রদের কর্তৃক একজন রিকশাচালককে মারধোর করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। একজন ছাত্রের ড্রেনে কলার খোসা ছুঁড়ে মারাকে কেন্দ্র করে বর্ণিত রিকশাওয়ালা মন্তব্য করলে উক্ত ছাত্রের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ সময় আরো ৬-৭ জন ছাত্র এসে রিকশাচালককে বেধড়ক পেটানো শুরু করলে রিকশাচালক সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাহায্য প্রার্থনা করে।
উল্লেখ্য, ক্যাম্প হতে সার্জেন্ট সেলিমের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত টহল দল সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত ছাত্ররা তাদের কথা না মেনে রিকশাওয়ালাকে জোরপূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে উদ্যত হলে টহল নেতা সার্জেন্ট সেলিম রিকশাচালককে তাদের গাড়িতে করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর পিকআপে উঠে হট্টোগোল শুরু করে এবং সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে প্রবেশ করে রিকশাচালককে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এমনকি তাৎক্ষণিক আরো ১৫-২০ জন অন্যান্য শিক্ষার্থী এসে পূর্বের ৬-৭ জন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে চরম সহিংসতাপূর্ণ আচরণ ও সৈনিকদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য ছুড়তে থাকে। এই পরিস্থিতিতে ইউনিটের অধিনায়ক ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত হয়ে সেখানে অবিলম্বে সহকারীসহ পুলিশের একজন প্রেরণ করেন বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করার জন্যে।
একই সময় উক্ত ইউনিটের ক্যাপ্টেন জিদান ও ক্যাপ্টেন সাদম্যান (এমও) সৈনিকসহ সেখানে পৌঁছে ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করলে ছাত্ররা সৈনিকদের গালাগালি করে। শুধু তাই নয় সেখানে ইউনিটের উপ-অধিনায়ক উপস্থিত হলে তার সঙ্গেও মারমুখো আচরণ ও গালাগালি করে। উপ-অধিনায়ক সৈনিকদের সহায়তায় ছাত্রদের গেটের বাইরে বের করে দেন। এই সময় উত্তেজিত হয়ে দুই একজন সৈনিক একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে বলে জানা যায়। এরপর অধিনায়ক ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গেও উগ্র ও অসম্মানজনক আচরণ করে। তারা অধিনায়ককে পদত্যাগ করতে বলাসহ ক্যাপ্টেন জিদানকে তাদের সামনে শাস্তি দেওয়ার দাবি করে এবং সৈনিককে চড় মারতে বলে।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তিনি অধিনায়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বলেন। অধিনায়ক সহকারী প্রক্টর-এর সঙ্গে পরামর্শ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা যায়, অধিনায়ক প্রক্টর, সহকর্মী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি (৪ জন শিক্ষার্থী) এর সঙ্গে বসে বিষয়টি মধ্যস্থতা করেছেন।
Leave a Reply