ধেয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল। রোববার (২৬ মে) বিকালে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এই ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর প্রভাবে এরই মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বাতাস এবং বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশ ওয়েদার অবজার্ভেশন টিম’ (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, দেশের দিকে ধেয়ে আসা বৃষ্টিবলয় তুফানটি একটি প্রবল শক্তিসম্পন্ন ক্রান্তীয় রেইন বেল্ট।
সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি সর্বাধিক সক্রিয় থাকবে সিলেট বিভাগের সকল জেলা। এছাড়া ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অধিক সক্রিয় থাকবে। এছাড়া রাজশাহী ও রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে মাঝারি মাত্রায় সক্রিয় থাকবে।
বৃষ্টি বলয় তুফান চলাকালীন বেশি সক্রিয় এলাকায় বেশিরভাগ সময়ই আকাশ মেঘাছন্ন থাকতে পারে এবং অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী।
এই বৃষ্টিবলয় ২৬ মে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণ অংশ দিয়ে প্রবেশ করে ও ২৮ মে সিলেট হয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে। বৃষ্টিবলয়টি চলাকালীন দেশের অধিকাংশ এলাকায় একটানা বৃষ্টি হতে পারে।
এই বৃষ্টি বলয় চলাকালীন সিলেট ও দেশের উপকূলীয় নিচু এলাকায় সাময়িক বন্যার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিডব্লিউওটি।
তুফান চলাকালীন দেশের কোন বিভাগে গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে-
ঢাকা- ২০০ মিলিমিটার
খুলনা- ২৫০ মিলিমিটার
বরিশাল- ৩০০ মিলিমিটার
সিলেট- ৩৫০ মিলিমিটার
ময়মনসিংহ- ৩০০ মিলিমিটার
রাজশাহী- ১২০ মিলিমিটার
রংপুর- ১২০ মিলিমিটার
চট্টগ্রাম- ১৩০ মিলিমিটার
বৃষ্টি বলয় তুফান চলাকালীন কোন জেলায় গড়ে কত মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে-
জেলার নাম বৃষ্টির পরিমাণ (মিমি)
সিলেট- ৪০০+
সুনামগঞ্জ- ৩৫০+
হবিগঞ্জ- ৩২০+
মৌলভীবাজার- ৩০০+
রংপুর- ৮০+
দিনাজপুর- ৭০+
ঠাকুরগাঁও- ৬০+
পঞ্চগড়- ৮০+
নীলফামারী- ৯০+
লালমনিরহাট- ১০০+
কুড়িগ্রাম- ১৩০+
গাইবান্ধা- ৭০+
জয়পুরহাট- ৭০+
নওগাঁ- ৬০+
বগুড়া- ১২০+
চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ৮০+
রাজশাহী- ১০০+
নাটোর- ১৩০+
সিরাজগঞ্জ- ১৮০+
পাবনা- ১৪০+
খুলনা(উত্তর)- ৩২০+
খুলনা(দক্ষিণ)- ৩৫০+
সাতক্ষীরা(উত্তর)- ৩৩০+
সাতক্ষীরা(দক্ষিণ)- ৩৮০+
বাগেরহাট(উত্তর)- ৩৪০+
বাগেরহাট(দক্ষিণ)- ৩৫০+
যশোর- ২৮০+
নড়াইল- ৩০০+
মাগুরা- ২৮০+
ঝিনাইদহ- ২৩০+
চুয়াডাঙ্গা- ২০০+
মেহেরপুর- ১৯০+
কুষ্টিয়া- ১৮০+
বরিশাল- ৩৫০+
পিরোজপুর- ৩৫০+
ঝালকাঠি- ৩৬০+
পটুয়াখালী- ৩০০+
বরগুনা- ৩৬০+
ভোলা- ৩০০+
চট্টগ্রাম- ৯০+
ফেনী- ১৪০+
লক্ষ্মীপুর- ১৩০+
চাঁদপুর- ১৫০+
কুমিল্লা- ১৪০+
ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ১৮০+
খাগড়াছড়ি- ৮০+
রাঙ্গামাটি- ৬০+
বান্দরবান- ৪৫+
কক্সবাজার- ৪০+
নোয়াখালী- ২২০+
ঢাকা- ২৫০+
গোপালগঞ্জ- ৩২০+
মাদারীপুর- ৩০০+
শরিয়তপুর- ৩০০+
ফরিদপুর- ২৮০+
রাজবাড়ী- ২২০+
মানিকগঞ্জ- ২২০+
মুন্সিগঞ্জ- ২২০+
নারায়ণগঞ্জ- ২০০+
নরসিংদী- ২২০+
গাজীপুর- ২১০+
টাঙ্গাইল- ২০০+
কিশোরগঞ্জ- ২৯০+
ময়মনসিংহ- ৩১০+
জামালপুর- ২১০+
শেরপুর- ২৫০+
নেত্রকোনা- ৩০০+
কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ)- ২৫০+
২৪ পরগনা- ৩২০+
এছাড়া বৃষ্টি বলয় তুফান চলাকালে ভারতের দীঘা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা , বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ৯০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছে বিডব্লিউওটি।
‘বাংলাদেশ ওয়েদার অবজার্ভেশন টিম’ জানিয়েছে, এখানে দেয়া বৃষ্টির পরিমাণ একটা গড় ধারনা মাত্র, স্থানভেদে এর পরিমাণ কিছুটা হেরফের হতে পারে। এছাড়া দেশের কোনও কোনও এলাকায় কিছুটা বেশি বৃষ্টি হতে পারে ও কোনও স্থানে বৃষ্টি অনেক কম হতে পারে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, এসব তথ্য তাদের গবেষণা থেকে প্রপ্ত। আবহাওয়া সংক্রান্ত অফিসিয়াল পূর্বাভাসের জন্য বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে রোববার (২৬ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদফতরের বিফ্রিংয়ে জানানো হয়েছে, ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আজ বিকেল ৩টার দিকে উপকূলীয় এলাকায় এর অগ্রভাগ আছড়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত নাগাদ স্থলভাগ অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র। আর বিকেল ৩টা থেকে উপকূলে রেমালের অগ্রভাগের প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব থাকবে। রেমাল সিভিয়ার সাইক্লোন স্ট্রোমে পরিণত হওয়ার সময় ১১০ থেকে ১২০ কিমি পর্যন্ত গতিবেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাবে।
এ আবহাওয়াবিদ বলেন, মোংলা ও পায়রা বন্দরের দিকে এগোচ্ছে রেমাল। উপকূলীয় ১৬ জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ভয়াবহতার সব লক্ষণই রয়েছে। বিকেল ৩টার আগে উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
Leave a Reply