বাংলাদেশকে ন্যূনতম পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করে একটি ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র করার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে একটি নিবন্ধে এ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এই নিবন্ধটি রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
নিবন্ধে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি। ছোট দেশ হলেও এত বিরাট জনগোষ্ঠীর কাছে সরকারকে নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশকে ন্যূনতম পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করে একটি ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র করা যেতে পারে। পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে দুটি করে চারটি প্রদেশ ও বৃহত্তর ঢাকা নিয়ে আরেকটি প্রদেশ।
তিনি বলেন, মেট্রোপলিটন ঢাকা কেন্দ্রশাসিত থাকবে। কেন্দ্রের হাতে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, সীমান্ত ও সমুদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো থাকবে। বাকি বিষয়গুলোতে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধান থাকলেও প্রদেশগুলো ব্যবস্থাপনায় থাকবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণও হবে প্রাদেশিক সরকারের কাঠামোতে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও চিন্তাবিদেরা অনেক আগে থেকেই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের দাবি করে আসছেন। এটি শুধু সময়ের দাবিই নয়, আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনা ও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির জন্য অত্যাবশ্যক। উপমহাদেশ ও সার্ক দেশগুলোকেও যদি আমরা বিবেচনায় নিই তাহলে দেখব, একমাত্র মালদ্বীপ ছাড়া অন্য সব দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বিদ্যমান।
নির্বাচন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামো বাংলাদেশের সংস্কারের অন্যতম দিক হওয়ায় নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকেও সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে নির্বাচন আইন এবং ভোটের পদ্ধতির। সম্পূর্ণ ‘ফাস্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ বা ওয়েস্ট মিনস্টার পদ্ধতির পাশাপাশি প্রাদেশিক ও জাতীয় সংসদের জন্য ৫০ শতাংশ ‘পিআর’ বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গ্রহণ হলে জাতীয় সংসদ একদলীয় শাসনের কেন্দ্রে পরিণত হবে না বলে মনে করি। তবে আমি সম্পূর্ণ নয়, অর্ধেক আসনে আনুপাতিক নির্বাচনের পক্ষপাতী। এ ব্যবস্থা নেপালে রয়েছে।
পুলিশ প্রশাসনের কথা উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে ফেডারেল রাষ্ট্র করতে গেলে পুলিশ প্রশাসনকেও বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। কেন্দ্রে বিশেষ পুলিশ বাহিনী বা কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্স থাকবে। পুলিশের তত্ত্বাবধান ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান ইউনিট (সিবিআই) নামক বিশেষ বাহিনীরও প্রয়োজন রয়েছে। ২০০৭-০৮ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
বিচারপতি নিয়োগে পর্ষদ গঠনের বিষয় নিয়ে বহু বছর ধরে আলোচনা চলছে। অতীতে বিচার বিভাগ সরকার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। কারণ, বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতিটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। বিচার ব্যবস্থাকে অবশ্যই স্বাধীন করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।
Leave a Reply