যত দিন যাচ্ছে, ততই পাকিস্তানে আর্থিক সংকট বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারও তলানিতে। ফুরিয়ে আসছে তহবিল। এই পরিস্থিতিতে দেড় লাখ সরকারি কর্মচারীর চাকরি খেল শাহবাজ শরিফ সরকার। যা পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে গণবিক্ষোভের জন্ম দিতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা।
আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দেড় লাখ সরকারি কর্মচারীর চাকরি বাতিলের পাশাপাশি ছ’টি মন্ত্রক পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। ২৯ সেপ্টেম্বর যা ঘোষণা করেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মহম্মদ অওরঙ্গজেব। যে মন্ত্রকগুলো বন্ধ হচ্ছে সেখানকার সিংহভাগ কর্মীকেই ছাঁটাইয়ের তালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া খরচ কমাতে দু’টি মন্ত্রক মিলিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে পাক সরকার। ফলে সেখানকার কর্মীদের কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এই নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি ইসলামাবাদ। সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এখনই ওই দুই মন্ত্রকের কর্মচারীদের ছাঁটাই করবে না শরিফ সরকার। আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চরম আর্থিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিতে চলেছে ইসলামাবাদ। সেই টাকা দেয়ার শর্ত হিসাবে পাকিস্তানকে বেশ কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। যে কারণে মন্ত্রক তুলে দিয়ে কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে শরিফ সরকার।
আইএমএফের থেকে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ বাবদ পেতে চলেছে পাকিস্তান। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর যার অনুমোদন দিয়েছে এই আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা। ঋণ পেতে পাক সরকারকে খরচ কমাতে বলেছিল আইএমএফ। পাশাপাশি, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি, কৃষি ও রিয়েল এস্টেটের মতো অপ্রচলিত খাতে কর বসানো এবং ভর্তুকি কমিয়ে দেয়ার মতো শর্তও মানতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পুরো ঋণের টাকা একেবারে পাক সরকারকে দিচ্ছে, এ কথা ভাবলে ভুল হবে। কয়েক কিস্তিতে ওই টাকা পাবে ইসলামাবাদ। বর্তমানে আইএমএফের থেকে প্রথম কিস্তির ১০০ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে শরিফ সরকার।
আইএমএফের ঋণ পেতে আমেরিকা সফরে যান পাক অর্থমন্ত্রী মহম্মদ অওরঙ্গজেব। দেশে ফিরে টাকা যে পাওয়া গিয়েছে, তা ফলাও করে জানিয়েছেন তিনি। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ঋণ না পেলে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া পাকিস্তানের কাছে আর কোনও দ্বিতীয় রাস্তা খোলা ছিল না।
এ প্রসঙ্গে পাক অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে একটি ত্রাণ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের জন্য শেষ প্যাকেজ হবে। আমরা আমাদের অর্থনীতির উন্নতির জন্য আইএমএফের সব দাবি মেনে নিয়েছি।’ পাকিস্তান জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর সংগঠনে যোগ দিতে চাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে তার জন্য দেশের অর্থনীতিকে অনেক বেশি সমৃদ্ধিশালী করার কথা বলেছেন অওরঙ্গজেব।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, ইসলামাবাদের পক্ষে জি২০ রাষ্ট্রগুলোর সংগঠনে যোগ দেয়া খুবই কঠিন। কারণ, এটি আর্থিক দিক থেকে বিশ্বের সেরা ২০টি দেশের তৈরি করা একটি গোষ্ঠী। যাতে রয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, চিনের মতো উন্নত অর্থনীতির দেশ।
উল্লেখ্য, আইএমএফের ঋণ পেতে যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, ইসলামাবাদে ফিরে তা স্পষ্ট করেছেন পাক অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ছ’টি মন্ত্রক বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর দু’টি মন্ত্রককে সংযুক্ত করা হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রক মিলিয়ে মোট দেড় লাখ পদ অবলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এরপরই দেশের করদাতাদের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন পাক অর্থমন্ত্রী। অওরঙ্গজেব জানিয়েছেন, ‘গত বছরের (২০২৩) নতুন করদাতার সংখ্যা ছিল আনুমানিক তিন লক্ষ। এ বছর এখনও পর্যন্ত নতুন করদাতা হিসাবে নাম নথিভুক্ত করেছেন ৭ লক্ষ ৩২ হাজার জন। অর্থাৎ দেশে করদাতার সংখ্যা এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে।’
যাঁরা করদাতা নন, তাঁদের সম্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু হতে চলেছে বলে জানিয়েছে পাক অর্থমন্ত্রী। এই ধরনের বাসিন্দারা আর সম্পত্তি বা গাড়ি কিনতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দেশ দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা মানতে রাজি নয় ইসলামাবাদ। অর্থমন্ত্রী অওরঙ্গজ়েব জানিয়েছেন, ‘অর্থনীতি সঠিক পথে চলছে। দেশের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ পাকিস্তানের জাতীয় রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গত বছর প্রায় দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল পাকিস্তান। অর্থনীতি বাঁচাতে আইএমএফের কাছে হাত পাতে ইসলামাবাদ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ওই সময় ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছিল পশ্চিমের এই প্রতিবেশী দেশ।
সূত্র: আনন্দবাজার।
Leave a Reply