ভয়াবহ রূপে ধেয়ে আসছে হারিকেন মিল্টন: নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া মানুষ!

হারিকেন মিল্টন আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে ক্যাটিগরি-৫ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের এ বার্তার পর অঙ্গরাজ্যটির বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা যে যার মতো হারিকেন মিল্টনের সম্ভাব্য আঘাত হানার অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লোরিডার ৫১টি শহরে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় স্কুল-কলেজ। বর্তমানে ২৮৫ কিলোমিটার গতিবেগে এটি অগ্রসর হচ্ছে। অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর রন ডিসানটিসের তথ্য মতে, মাত্র ৪৮ ঘণ্টার দূরত্বে হারিকেনটি অবস্থান করছে। ঝড়ের গতিবিধি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ঝড়ের ক্রমবর্ধমান কঠোর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরপরই সঙ্গে সঙ্গে বাসিন্দারা ফ্লোরিডা ছেড়ে যেতে শুরু করেন। কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, কেউ দলবেঁধে আবার কেউ পরিবহন যানে করে এলাকা ছাড়ছেন। গাড়ির চাপ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় তীব্র যানজট মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে।

তবে কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে মানুষ এভাবে যেন ঝড়ের সম্ভাব্য অঞ্চল ছেড়ে চলে যান। কারণ, বিপুল বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া এবং আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা দেওয়া অসম্ভব। স্থানীয়ভাবে কেবল ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা গেছে।

গভর্নর ডিসানটিস বাসিন্দাদের নিচু এলাকা থেকে দূরে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে যারা মোবাইল বাড়িতে (অস্থায়ীভাবে নির্মিত বাড়ি) থাকেন তাদের অবশ্যই নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ, ঝড়ের গতির কাছে পাকা ঘরও ভেঙে পড়তে পারে।

তিনি বলেছেন, স্থানীয়দের বিকল্প এবং উঁচু এলাকায় চলে যেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ওই বিকল্প আশ্রয়ও যেন ক্যাটাগরি-৩ বা ক্যাটাগরি-৪ হারিকেনের শক্তি সহ্য করতে পারে।

যাদের কোনো বিকল্প নেই তারা সরকারের প্রস্তুত করা ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নিতে পারবেন। যদিও সেখানে হাজারো লোকের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব তবুও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই একেবারে নিরূপায় না হলে সেখানে যাওয়ার জন্য অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

গভর্নর বলেন, ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূল বরাবর সব বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার আশা তিনি করেন না। তবে যারা আশ্রয় খুঁজছেন তাদের বেশিরভাগই আজ বা আগামীকাল সরে যাবে। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এদিকে কর্তৃপক্ষের জারি করা এক সতর্কবাতায় বলা হয়েছে, বুধবার পূর্ণ শক্তির সঙ্গে এ ঝড়টি জনবহুল শহর টাম্পা উপসাগরে আঘাত হানতে পারে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার বিগ বেন্ড শহরের উপকূলে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় হেলেন। এ সময় ওই এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪০ মাইল। বিধ্বংসী গতির এই ঝড়ের কারণে বিগ বেন্ড এবং এর আশপাশের এলাকার অজস্র গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তাঘাট ডুবে যায়।

ব্যাপক ধ্বংসাত্মক হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর হেলেনকে ‘ক্যাটাগরি ৪’ ঘূর্ণিঝড়ের তকমা দেয়। বিগ বেন্ডে আছড়ে পড়ার পর জর্জিয়া, টেনেসি, উত্তর ক্যারোলাইনা ও দক্ষিণ ক্যারোলাইনার দিকে এগোতে থাকে হেলেন। এ সময় কমতে থাকে ঝড়ের গতিবেগও। এবারের হারিকেন মিল্টন ‘ক্যাটাগরি ৫’ মাত্রার। তাই এর আচরণ আরও ধ্বংসাত্মক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *