বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ৩ ধাপ পেছাল বাংলাদেশ!

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে ৩ ধাপ অবনমন হয়ে এবার ৮৪তম অবস্থানে নেমেছে বাংলাদেশ। স্কোরে উন্নতি করলেও অন্য দেশগুলো থেকে পিছিয়ে পড়েছে। গত বছর ১৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮১তম। তবে চলতি বছর ১২৭টি দেশের মধ্যে অবস্থান ৮৪তম, স্কোর ১৯.৪। অর্থাৎ বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। সূচক অনুসারে, বাংলাদেশ বর্তমানে ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা মোকাবিলা করছে।
শুক্রবার প্রকাশিত গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) বা বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মানভিত্তিক ভেল্ট হ্যুঙ্গার হিলফে যৌথভাবে এ সূচক প্রকাশ করে।
দেশভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। এই নম্বর নিয়ে ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। গত বছর বাংলাদেশর মোট নম্বর ছিল ১৯; ১২৫টি দেশের মধ্যে ঠাঁই হয়েছিল ৮১তম স্থানে।
একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার-এই চারটি মানদ- বিবেচনায় নিয়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয় যে কোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়। অবশ্য ‘মধ্যম’ মাত্রার ক্ষুধার দেশ হিসেবে শ্রেণিকৃত বাংলাদেশে ২০১৬ সালের চেয়ে ক্ষুধার মাত্রা কমেছে; সে বছর স্কোর ছিল ২৪.৭।
সূচক বলছে, বাংলাদেশে ক্ষুধার মাত্রা মধ্যম পর্যায়ে। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯.৯ এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সে হিসাবে বাংলাদেশ মাঝারি অবস্থানে রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো ১১.৯ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার। আর ২.৯ শতাংশ শিশু তার ৫ম জন্মদিনের আগেই মৃত্যুবরণ করে। অপুষ্টির কারণে ৫ বছরের কম বয়সী ২৩.৬ শতাংশ শিশুর বয়স অনুপাতে উচ্চতা বাড়ছে না। এ ছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বাড়ছে না বলেও উল্লেখ করা হয় সূচকে।
তবে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল (৬৮তম অবস্থান, স্কোর ১৪ দশমিক ৭) ও শ্রীলঙ্কা (৫৬তম অবস্থান, স্কোর ১১ দশমিক ৩)। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।
ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতার দিক থেকে এ বছর ভারতের অবস্থান ১০৫তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৩। ভারত এ বছর ছয় ধাপ এগিয়েছে। আর সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর ২৭ দশমিক ৯। দেশটি সাত ধাপ পিছিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের অবস্থান ১১৬তম, স্কোর ৩০ দশমিক ৮। এটিও দুই ধাপ পিছিয়েছে।
জিএইচআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্বিকভাবে ক্ষুধা এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। নি¤œমানের খাদ্য, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে এ অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়ছে; বিশেষ করে শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা উচ্চ স্তরে রয়ে গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টির শিকার এবং ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু তাদের জন্মের পর পাঁচ বছরে পৌঁছানোর আগেই মারা যায়। দেশের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি অপুষ্টির কারণে থমকে গেছে। আর অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ নষ্ট হয়েছে; অর্থাৎ উচ্চতার অনুপাতে তাদের ঠিকমতো ওজন বাড়ছে না।
এই সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হলো শূন্য। আর সবচেয়ে খারাপ স্কোর হলো ১০০ পয়েন্ট। স্কোর বাড়লে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি, আর কমলে পরিস্থিতির উন্নতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *