যে ভুলে মাথায় হাত রোহিতের!

বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির পেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিনে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। মাত্র ৪৬ রানে অলআউট হয়ে একগাদা লজ্জার রেকর্ড সঙ্গী হয়েছে স্বাগতিকদের। ভারত অধিনায়ক যা বলছেন, এক কথায় তার অর্থ, পিচ এবং কন্ডিশন কোনেটাই পড়তে পারেননি তিনি।

‘এই পিচে পেসাররা সাহায্য পেয়েছে। আমরা বুঝতে পারিনি যে এমনটা হতে পারে। ভেবেছিলাম প্রথম সেশনের পর পেসাররা সাহায্য পাবে না। পিচে ঘাসও ছিল না বেশি। তাতেও আমরা মাত্র ৪৬ রানে আউট হয়ে গিয়েছি। আমাদের যে শট নির্বাচন ঠিক ছিল না এটা বোঝাই যাচ্ছে। খুব খারাপ একটা দিন গেল। অনেক সময় কিছু একটা করার ইচ্ছা থাকলেও আপনি করতে পারেন না। এটা সে রকমই একটা দিন।’ বলছিলেন রোহিত।

টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তও ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন ভারত অধিনায়ক, ‘আমিই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের পিচ বুঝতে ভুল হয়েছে। ভেবেছিলাম পাটা উইকেট হবে। ভাল করে পিচ পড়তে পারিনি। অধিনায়ক হিসাবে ৪৬ রানের স্কোরটা দেখতেও খারাপ লাগছে। কারণ টসে আমিই গিয়েছিলাম। তবে বছরে একবার-দু’বার খারাপ সিদ্ধান্ত নিলে এত চাপে পড়ার কিছু নেই। পিচ সাদামাটা হবে ভেবেই কুলদীপকে (যাদব) নেওয়া হয়েছিল, কারণ ফ্ল্যাট পিচে সে উইকেট নিতে দক্ষ।’

দীর্ঘ আট বছর পর এই ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন কোহলি। মূলত শুভমান গিল চোটে ছিটকে যাওয়ায় এমন পরিকল্পনা। তবে ডাক মেরে সেটি ভেস্তে দিয়েছেন এই তারকা ব্যাটার। সেভাবে ছন্দে না থাকা কোহলির পরিবর্তে কাউকে আনা যেত কি না, এমন প্রশ্নে অধিনায়ক রোহিতের জবাব, ‘আমরা কেএলের (রাহুল) ব্যাটিং পজিশন নিয়ে খুব একটা নাড়াচাড়া করতে চাই না। ছয় নম্বরে সে থিতু হয়ে গেছে। তাই ওকে ওখানেই খেলানো উচিৎ। একই কথা সরফরাজের ক্ষেত্রেও বলব। যে পজিশনে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে সেখানেই খেলাতে চেয়েছিলাম। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ওর কাছে নতুন। তাই বিরাটই এগিয়ে এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলো। আমাদের আলোচনা হয়েছিল। বিরাট কোনো আপত্তি করেনি। সতীর্থরা এভাবে দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছে দেখে ভাল লেগেছে!’

কিউই পেসারদের তোপের মুখে ৩১.২ ওভারে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে গেছে ভারতের প্রথম ইনিংস। ঘরের মাঠে টেস্টে ভারতের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটিই। দেশে তাদের আগের সর্বনিম্ন ছিল ৭৫, ১৯৮৭ সালে দিল্লিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ভারতের তৃতীয় সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ এটি। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইডে দিবা-রাত্রির টেস্টে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৩৬ রানে, আর ১৯৭৪ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তারা অল আউট হয়েছিল ৪২ রানে। সর্বপরি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে কোনো দলের সর্বনিম্ন সংগ্রহও ভারতের এই ৪৬। কিউইদের বিপক্ষে আগের সর্বনিম্ন- ২০১২ সালে নেপিয়ারে ৫১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।

বেঙ্গালুরুতে ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন শূন্য রানে, তাদের সবাই প্রথম আট জনের মধ্যে। কোনো টেস্ট ইনিংসে প্রথম আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচ জনের শূন্য রানে আউট হওয়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। ১৮৮৮ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। এক ইনিংসে ভারতের পাঁচ জনের বেশি ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা আছে দুটি। এই বছরেই কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ও ২০১৪ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬ জন শূন্য রানে আউট হয়েছিল ভারতের।

ভারতকে পঞ্চাশের নিচে গুটিয়ে দিতে ১৫ রানে ৫ উইকেট নেন পেসার ম্যাট হেনরি। আরেক পেসার উইল ও’রোকের শিকার ২২ রানে ৪টি। আরেকটি নেন টিম সাউদি। ২০১২ সালের পর এই প্রথম এক ইনিংসে ভারতের ১০ উইকেট নিলেন সফরকারী পেসাররা। সেবার এই বেঙ্গালুরুতে নিউ জিল্যান্ডেরই তিন পেসার ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি ও ডগব্রেসওয়েল মিলে নিয়েছিলেন ভারতের ১০ উইকেট।

জবাবে এখন পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে পথম ইনিংসে সফরকারি নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২২৬ রান। ১৭৮ রানে এগিয়ে গেছে টম লাথামের দল। ৯১ রান করে আউট হয়েছেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে। রাঁচিন রবীন্দ্র খেলছেন অপরাজিত ৪১ রানে। ২ উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *