বিদেশে পালিয়েও বেতন পাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেত্রী অর্ণা!

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেই রাজশাহীর ‘রাজকণ্যা’ খাত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের বড় মেয়ে ফারিহা জামান অর্ণা থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রের সাধারণ চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত থাকলেও ঠিকমতো অফিস করতেন না। এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারি থেকে অফিস করতে দেখা যায়নি অর্ণা জামানকে। তবে, ৯ মাস অতিবাহিত হলেও নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তিনি।

আনিক ফারিহা জামান অর্ণা বাবা লিটনের প্রভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের পদও বাগিয়েছিলেন। তার তোপে খোদ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও তটস্থ থাকতেন। এছাড়াও সর্বশেষ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদককের পদও বাগিয়েছেন অর্ণা।

রাবি চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখ অফিস করেন আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা। গত ৯ মাসে আর অফিস করতে দেখা যায়নি তাকে। তবে অফিস না করেও গত ৯ মাসে সরকারি বেতন-ভাতা পেয়েছেন প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অষ্টম গ্রেডের বেতন পান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের সময় বাবার রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে সেন্টারে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান অর্না। অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়ায় ৬ মাস পরপর নবায়ন করে গত সাড়ে পাঁচ বছর ধরে রাবির মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত তিনি। তার সর্বশেষ ছয় মাসের জন্য নবায়নকৃত চাকরির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সাল পর্যন্ত। যদি নতুন করে চাকরি নবায়ন করা না হয় তাহলে অটোমেটিক চাকরি হারাবেন।

এদিকে, চাকরিতে প্রবেশের সাড়ে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও তাকে রাবির চিকিৎসক হিসেবে চেনেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। মাসে দু-একদিন অফিস করেই পুরো মাসের বেতন হাতিয়ে নিতেন তিনি। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রভাবসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনিকা ফারিহা জামান অর্ণার ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল-মেসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক ডা. মাফরুহা সিদ্দিকা লিপি বলেন, ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্না বিগত ৮-৯ মাস ধরে ডিউটি না করেও বেতনভাতা ঠিকই পাচ্ছেন। অনেক চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। বিষয়টি রেজিস্ট্রারকে অবগত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব বলেন, ৫ আগস্টের পর যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিজ দফতরে উপস্থিত হননি, আমরা তাদের কাছে নোটিশ পাঠিয়েছি। আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা যেহেতু ৯ মাস ধরে অফিস করছেন না তার বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *