বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মেইন সড়ক এলাকার স্বপ্ন বিলাস বহুতল ভবনের চারতলার ফ্লাট থেকে বাবা ও শিশু কন্যার গ’লাকা’টা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হচ্ছেন, পিতা নাঈম হাওলাদার (৩৫) এবং শিশু কন্যা রাবেয়া বশরী রোজা (৫ বছর ৪ মাস)। ওই ফ্লাটে নিহতরা স্বজনদের সাথে ভাড়া থাকতেন। নাঈম উজিরপুরের বরাকোঠা এলাকার শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে এবং ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিনের গাড়ির চালক ছিলেন।
দাদী নাসিমা বেগম ও ফুফু আখি আক্তার জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের কারণে চার মাস পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দেন নাঈম। কিন্তু মেয়ে রোজাকে তার কাছে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় একাধিক মামলাও হয়েছে। এ কারণে নাঈম মানসিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসাও চলছে। সর্বশেষ গতকাল মোবাইল করে রোজার মা জানিয়েছে আজ বরিশালে এসে মেয়েকে তার কাছে নিয়ে যাবে। এ খবর পাওয়ার পর থেকেই আরও ভেঙে পড়ে নাঈম। সে কোনভাবেই তার মেয়েকে হাতছাড়া করতে চায়নি। আজ সকালে যে কোন সময় রোজাকে বটি দিয়ে গ’লা কেটে হ’ত্যা করে। পরে একই বটি দিয়ে নিজের গ’লা কেটে আ’ত্মহ’ত্যা করে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বিষয়টি ধরা পড়ে।
নাঈমের বাবা শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ফ্লাটের তিন কক্ষে প্রথম কক্ষে ঘুমাতেন তার স্ত্রী এবং মেয়ে। ভিতরের কক্ষে থাকতেন নাঈম, তার মেয়ে এবং তিনি। আজ সকালে ঘুম থেকে জেগে বাইরে যাওয়ার সময় নাঈম তার কাছ থেকে চেয়ে ২০ টাকা নেয়। এ সময় বাবা-মেয়েকে খাটে দেখতে পান তিনি। সকাল ৭টার বের হওয়ার পর ৯টার দিকে তার মেয়ে নাসিমা মোবাইলে জানায় এ ঘটনা।
তার ধারণা সে ঘর থেকে বের হওয়ার পরই নাঈম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। স্ত্রীর সাথে তালাক হওয়ার পর থেকেই মানসিকভাবে সমস্যা দেখা দেয় নাঈমের। তার মধ্যে রোজার মা খবর দেয় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এসব বিষয় নিয়ে হয়ত এ ঘটনা ঘটিয়েছে নাঈম।
তিনি আরও বলেন, ৬ বছর পূর্বে নাঈমের সাথে বিয়ে হয় অনার। ওই সময় জোরপূর্বক নাঈমের সাথে অনাকে বিয়ে দেয়া হয়। সেই বিয়ে আমরা মেনে নেই। কিন্তু গত এক বছর ধরে নাঈম ও অনার মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল না। তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এ নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই একাধিক মামলা দায়ের হয়। গেল চার মাস পূর্বে তালাক দেয়া হয় অনাকে। এর মধ্যে অনার এক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।
বাড়িওয়ালা মো. পলাশ বলেন, চার মাস পূর্বে নাঈম তার মা-বাবা ও বোনকে নিয়ে ফ্লাট ভাড়া নেয়। ফ্লাটে ওঠার পর থেকেই নাঈমকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হতো। বিষয়টি তার স্ত্রীও খেয়াল করে তাকে অবহিত করেন। পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ফ্লাট ভাড়া নেয়ার পূর্বে নাঈমের সাথে তার স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আজ বুধবার সকালে ওই ফ্লাট থেকে ডাক-চিৎকার শোনার পর তারা জানতে পারেন রোজার গ’লাকা’টার পর নাঈম একই বটি দিয়ে নিজের গ’লাকেটে আ’ত্মহ’ত্যা করে। এরপর বিষয়টি ত্রিপল নাইনে অবহিত করেন। সেখান থেকে কাউনিয়া থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যান।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানার সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশুকে গ’লাকেটে হ’ত্যার পর বাবা নিজের গ’লাকেটে আ’ত্মহ’ত্যা করে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নাঈমের সাথে তার স্ত্রীর তালাক হয়েছে। এরপর থেকে শিশুকন্যাকে কাছে রাখেন নাঈম।
পরিবারের স্বজনদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, আজ সকালে রোজার মায়ের আসার কথা ছিল। রোজাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এ বিষয়টি নাঈম মানতে পারেনি। সেখান থেকেই হয়তো সে এ হ’ত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারে। তবে বিষয়টি আরও গভীর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হবে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
Leave a Reply