কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার একটি বিদ্যালয়ে নিয়মিত না গেলেও হাজিরা খাতায় ঠিকই উপস্থিতি দেখানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষকরা এসে অফিসে বসে করেন গল্প গুজব, আর শিক্ষার্থীরা আসে মাঝে মধ্যে। তারপরেও নিয়মিত হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় তাদের। উপবৃত্তি আর সরকারি সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রলোভনে ভর্তি করানোরও অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার পাইকলক্ষীয়া হাজী মো.মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। তার দাবি, স্থানীয় একটা পক্ষ বিভিন্ন কারণে স্কুলটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। এদিকে শিগগিরই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
গত রোববার (৯ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, জনশূন্য মাঠ। ভেতরেও সুনসান নিরবতা। মনে হলো হয়তো পরীক্ষা চলছে। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। অফিস কক্ষে তিনজন শিক্ষককে পাওয়া গেলেও কোনো শ্রেণি কক্ষেই শিক্ষার্থী ছিল না।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন নূরুল আফসার। প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী জোসনা আক্তার সহকারী শিক্ষক। অপর সহকারী শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ঝরনার ছেলে মাহমুদুল হাসান রাসেল কমিটির সভাপতি।
আবু কাউছার নামে একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়ে পাকুন্দিয়া মডেল মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক সুপারিশ করে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি দেখিয়ে রেখেছেন। কিন্তু সে ক্লাস করে মাদরাসায়।
শিক্ষক বলেছেন, মেয়ে মডেল মাদরাসায় পড়ুক, এখান থেকে সরকারি একটা সার্টিফিকেট নিয়ে রাখলে ভালো হবে। তিনি প্রধান শিক্ষককে প্রশ্ন করেন একই সময়ে যদি দুই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হয় তখন কী করবো? শিক্ষক বললেন সঠিক সময়ে মাদরাসায় পরীক্ষা দেবে, আর স্কুলেরটা দেবে বাসায় বসে। যেই কথা সেই কাজ। বাসায় বসেই দিতে পারে পরীক্ষা।
ফয়সাল হক রাকিব নামে একজন জানান, স্কুলটিতে হাতে গুণে ১৫ জন শিক্ষার্থীও পাওয়া যাবে না। তবে স্কুলের খাতায় অনেক বেশি দেখা যাবে। আর বিভিন্ন কর্মকর্তারা যখন পরিদর্শনে আসেন তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনেন শিক্ষকেরা।
প্রধান শিক্ষক নূরুল আফসার জানান, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস ছুটি হয়ে গেছে। কারো হাজিরা না থাকা প্রসঙ্গে বললেন, ভুলে হাজিরা খাতা ক্লাসে নেয়া হয়নি। তবে দ্বিতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় ছয়জন শিক্ষার্থীর হাজিরা দেখিয়েছেন তিনি। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে বললেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। যদিও তারা আর আসেনি সারা দিনেও।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো.মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯০ সনে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সরকারিকরণ হয় ২০১৩ সনে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টির এমন দৈন্যদশা বলে জানান এলাকাবাসী। বিদ্যালয়টির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পার্শ্ববর্তী একাধিক মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি রয়েছে। শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেয় হাজী মাছিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জন উল্লেখ্য করলেও এলাকাবাসী জানান, মোট শিক্ষার্থী ৩০ জনের বেশি হবেই না।
Leave a Reply