বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবারতন্ত্র কায়েম হবে না বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসানে সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখা হবে যেন কেউ পর পর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন। এ ছাড়া দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমান বলেন, শেখ হাসিনার সময় আমরা তথাকথিত উন্নয়নের রাজনীতি দেখেছি। কিন্তু পতিত সেই রাজনীতির ভিত্তি ছিল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন। অন্যদিকে জনগণের ভোটে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, আপনারা দেখতে পাবেন, আমাদের ৩১ দফার আলোকে, জনগণের ক্ষমতায়ন ও অংশীদারিত্বের রাজনীতি। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা।
তারেক রহমান বলেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয় বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। আমরা সংবিধানে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের সংস্কার চাই। অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা এবং সঞ্চয় নিশ্চিত হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই তারেক রহমান বলেন, অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা, বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, কূটনীতিক, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজ আমরা যারা এখানে উপস্থিত রয়েছি, আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে ভিন্নতা আছে, সেটিই স্বাভাবিক। তবে আমি বিশ্বাস করি, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ধারার মধ্যেও বৃহত্তর পরিসরে আমাদের সবার মধ্যে একটি বিষয়ে আদর্শিক ঐকমত্য রয়েছে। আর সেই বিষয়টি হলো, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।
তারেক রহমান বলেন, আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবে না। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি লেভেলে নিশ্চিত করা হবে, কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, আমরা দল-মত নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে চাই। ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে, বিএনপি সরকারের সময়, বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো, কার্টুন আঁকতে পারত। আপনাদের নিশ্চই মনে আছে, আমাকে নিয়ে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিডিয়ার একাংশ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ, মিডিয়া ট্রায়াল ও প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেন করেছিল। আমরা তার প্রতিদানে কোনো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করিনি, কাউকে হেনস্থা করিনি, কোনো সম্পাদককে জেলে পাঠাইনি।
তারেক রহমান বলেন, আমরা সবাই এমন দেশ গড়তে চাই, যেখানে আর কখনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। আমরা সবাই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ চাই, যেখানে জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নেবে না। আমরা সবাই একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশ চাই, যেখানে গণআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে, নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকার নিশ্চিত করবে জনগণের মালিকানা ও অংশীদারিত্ব।
তারেক রহমান বলেন, আমরা মনে করি, একটি দেশে নির্বাচিত সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনা করা, যেন ‘রুলস-বেসড অর্ডার’ ঠিক থাকে। রাষ্ট্রে যদি আইনের অনুশাসন থাকে, জবাবদিহিতা ও সুশাসন থাকে, তা হলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগের মতো পরিবারতন্ত্র ও অলিগার্ক শ্রেণি তৈরি হবে না, বিভাজন ও বৈষম্য থাকবে না, সমাজের প্রতিটি স্তরে দলীয়করণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় ঘটবে না। আমরা যদি একটি ‘রুলস বেসড’ রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, সারা পৃথিবী থেকে ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইভেট ক্যাপিটাল’ নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের ‘পাবলিক সেক্টরের’ সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।
তারেক রহমান বলেন, আজ আমরা ৩১ দফার যে আলোচনা এখানে করেছি, তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে, আকাক্সক্ষার আলো দেখাবে পরিবর্তনকামী গণমানুষকে। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের এই রূপরেখা তৈরি হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন -২০৩০, বিএনপির জনসম্পৃক্ততা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রথমে প্রদত্ত ২৭ দফার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে ৩১ দফায় পরিণত হয়। বর্তমানে দেশে আলোচিত প্রায় সব সংস্কার প্রস্তাবই আমাদের ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কারের উদ্দেশ্য বলতে সেটিই বুঝি, যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্য নয় বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে, তার ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা এবং সঞ্চয় নিশ্চিত হবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবে। যে সংস্কার সব মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে, যে সংস্কার মানুষকে কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবা দেবে, যে সংস্কার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি, যা কৃষক, শ্রমিক এবং সব কর্মজীবী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত করবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যেন পুনাবৃত্তি না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে কেউ পরপর দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে। আমরা আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য তরুণ ও বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান, আর কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা অনুযায়ী বেকার ভাতা প্রবর্তন। আমরা নিশ্চিত করতে চাই সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ, তৃণমূলের ক্ষমতায়ন এবং আবারো ঐতিহাসিক খাল কাটা কর্মসূচির বাস্তবায়ন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, জ্বালানি, জলবায়ু, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রে আনতে চাই যুগোপযোগী আমূল পরিবর্তন। যেন তৈরি হয় দক্ষ মানবসম্পদ, বৃদ্ধি পায় রপ্তানিমুখী শিল্প ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স, স্থাপিত হয় মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, কৃষক ও উৎপাদনকারীদের জন্য ন্যায্য মূল্য, চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও বহুভাষার প্রশিক্ষণ, বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সবার জন্য পর্যায়ক্রমিক আবাসন সুবিধা ও সামাজিক সুরক্ষা এই পরিকল্পনাগুলো ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী-সমতল-পাহাড়ি নির্বিশেষে সুষম ও সমঅধিকারের আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে একটি ঐকমত্যের ভিশন বলেই আমি মনে করি।
তারেক রহমান বলেন, পরিবেশ, পরিস্থিতি, দেশের প্রয়োজন এবং মানুষের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৩১ দফাকে সংযোজন, বিয়োজন, পুনর্বিন্যাস বা পরিবর্তনও করা যেতে পারে। তবে তা হবে স্টেকহোল্ডার কন্সালটেশন তথা অংশীজন পরামর্শ ও জনমত ঐক্যের মাধ্যমে। সময়ের সঙ্গে এই ৩১ দফাই একদিন আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য তথা সুখী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্জনের দ্বার উন্মোচন করবে, যা বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিত হবে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, শিল্পায়নে সাফল্যম-িত, অর্থনীতিতে গতিশীল, মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এবং সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে।
তারেক রহমান গত ১৬ বছর ধরে এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি ব্যক্তি, দল, সংগঠন ও গোষ্ঠী- তাদের সবার আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে, প্রতিটি শ্রেণি-পেশা-মতের মানুষের অংশগ্রহণকে সম্মান জানিয়ে, লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনে এবং জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের সমন্বিত অগ্রাধিকার।
তারেক রহমান বলেন, গত ১৬ বছরে আমার নিজের, আমার দলের এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা আপনাদের অনেকের ‘ফ্রিডম অব স্পিচ’, ‘ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন’ এবং ‘ফ্রিডম অব অ্যাসোসিয়েশন’ সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী, ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক, ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ভাবনা প্রকাশের কারণে, কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে, কাউকে হেনস্থা করা হবে না। সত্য গোপন করতে মেইনস্ট্রিম ও সোশ্যাল মিডিয়া যেমন বাধ্য থাকবে না, তেমনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটির প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার এবং আমরা মিডিয়ার কাছ থেকে নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
তারেক রহমান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ও বিচার, পরোয়ানা ছাড়াই গণগ্রেপ্তার এবং চরম মানবাধিকার লংঘনের মাধ্যমে যে ভয়ের সংস্কৃতি গত ১৬ বছরে গড়ে উঠেছিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে সেটি নির্মূল করার জন্য। জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করব প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে কেবল একটি দল থেকে অন্য দলের কাছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হস্তান্তর নয় বরং ক্ষমতার পালাবদলে এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হওয়া উচিত, যেখানে সমাজের পরিবর্তিত অবস্থা ও জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখা যায়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সীমাহীন খুন, হামলা, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও দলীয়ভাবে তাদের শাস্তি দেওয়ার কোনো ইতিহাস নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে দেখা যায়, দেড় হাজারেরও অধিক গণতন্ত্রকামী মানুষকে গণঅভ্যুত্থানে হত্যা করার পরও আওয়ামী লীগের কোনো নেতার কোনো অনুতাপ, অনুশোচনা বা আত্মসমালোচনার নজির নেই। অপরদিকে আমরা সবাই জানি যে, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে। তারপরেও এত বিশাল সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কোনো অপরাধে জড়িত হলে, তা জানামাত্রই আমরা দ্রুত সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছি।
তারেক রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়েছিল, পুলিশের অনুপস্থিতি ছিল। সেই সময়ে দলীয়ভাবে বিএনপি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, দেশকে আগলে রেখেছে, নিশ্চিত করেছে জননিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে না জড়িয়ে সহিংসতাকে প্রতিহত করেছে এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র ঠেকাতে পূজার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মন্দির ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধসহ সব মানুষের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ, কিংবা ভৌগোলিক-আদর্শিক অবস্থান নির্বিশেষে, প্রত্যেক নাগরিক যেন তার ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অধিকার বিনা বাধায় উপভোগ করতে পারে সেই লক্ষ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিসেবে আমরা কাউকে বিবেচনা করি না। প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই বিএনপির নীতি। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শই বিএনপির রাজনীতি। আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম, দল ও মত যার যার তবে রাষ্ট্র সবার।
তারেক রহমান বলেণন, জাতীয় ঐতিহ্য ও অতীতের ভালো অর্জনগুলোকে ধারণ করে আমাদের চেতনা এবং দায়বদ্ধতাকে হতে হবে ভবিষ্যৎমুখী। আমরা আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চাই। গতানুগতিক ধারার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমাদের উৎসাহ দিতে হবে আধুনিকতাকে, বরণ করে নিতে হবে অভিনবত্বকে। সামনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আলিঙ্গন করে নিতে হবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চিন্তাধারাকে, যা পরবর্তীকালে পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। দেশে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যেন স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারেন সে ব্যাপারে নিশ্চিয়তা দেয়া হবে। ১৬ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করা হবে। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যেনো ক্ষমতার জন্য না হয়ে উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য হয় তা নিশ্চিত করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিক দলগুলোর মতামত নিয়েই রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ১৩ জুলাই অর্থাৎ এক বছরেররও বেশি সময় আগে যে রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি দিয়েছিল তা আবার সবার সামনে তুলে ধরতেই আয়োজন আয়োজন। নতুন যে প্রস্তাব দেওয়া হবে, এর সঙ্গে ৩১ দফা মিলে যাবে, মিলতে হবেই। কারণ, এটা জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ভাবনা থেকেই করা হয়ছে। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়েতের নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক ডক্টর বোরহান উদ্দিন খান, এ্যাডভোকেট এলিনা খান, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এনডিএম এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ। উপস্থাপনা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, এনপিপির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।
এছাড়া নরওয়ে রাষ্ট্রদূত ও পাকিস্তান হাইকমিশনারসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরবসহ ৩৮ দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের চায়ের আমন্ত্রণে ফখরুলসহ বিএনপির তিন নেতা ॥ ঢাকায় কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের চায়ের আমন্ত্রণে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের তিন নেতা। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মেগান বোল্ডিনের গুলশানের বাসায় গিয়ে চায়ের আমন্ত্রণে অংশ নেন। এ সময় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
১০ বিভাগের নেতাদের প্রশিক্ষণ শুরু ১৯ নভেম্বর ॥ বিএনপির ১০ বিভাগের নেতাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হবে ১৯ নভেম্বর থেকে। ঘোষিত সময়সূচি অনুসারে ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিভাগের নেতাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এর পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ, ২৫ নভেম্বর খুলনা বিভাগ, ৩০ নভেম্বর সিলেট বিভাগ, ২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ বিভাগ, ৭ ডিসেম্বর রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং ২১ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রস্তাবিত বিভাগ ফরিদপুর ও কুমিল্লার বিএনপি নেতাদের প্রশিক্ষণ।
Leave a Reply