ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু মহাসভা। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে এই ঘটনার সময় পুলিশের বাধা পেয়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় গণমাধ্যম *টাইমস অব ইন্ডিয়া* জানিয়েছে, এই ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
### **ঘটনার পেছনের কারণ** বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কয়েকদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ করে আসছে হিন্দু মহাসভাসহ বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের অভিযোগ, বাংলাদেশ সরকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দমনমূলক আচরণ করছে।
চিন্ময় দাসকে গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলায় এর আগে আরও দুইজন—রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাস—গ্রেপ্তার হন।
### **কলকাতার ঘটনা** চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভের অংশ হিসেবে হিন্দু মহাসভার সদস্যরা বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় হিন্দু মহাসভার সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়, যার ফলে এক পুলিশ সদস্য আহত হন।
### **বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া** চিন্ময় দাস ইস্যু ভারতের রাজনৈতিক মহলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। দেশটির সংসদ লোকসভায় এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রত্যক্ষ মদদেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
### **উপ-হাইকমিশনের অবস্থান** কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “উপ-হাইকমিশনের কাজ কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করা এবং দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। এ ধরনের হামলা শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং সামগ্রিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে।”
### **চিন্ময় দাস ও মামলার পটভূমি** চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা অবমাননা একটি গুরুতর অপরাধ।
### **উপসংহার** এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর এমন আক্রমণাত্মক আচরণ দুই দেশের কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উভয় দেশকেই সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
Leave a Reply