আবেদন পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদনঃ অবসরপ্রাপ্ত শত কর্মকর্তাকে সচিব পদমর্যাদার সুপারিশ!

তালিকায় আছে গত সরকারের সময় বঞ্চিত দেড় হাজার কর্মকর্তার নাম * এক হাজার জনকে অতিরিক্ত সচিব এবং প্রায় ৪০০ জনকে যুগ্মসচিব মর্যাদা দেওয়া হবে

বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিতসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অবসরে যাওয়া শতাধিক কর্মকর্তাকে সচিব পদমর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ধরনের প্রায় এক হাজার কর্মকর্তাকে দেওয়া হবে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা। এছাড়া আরও প্রায় চারশজনকে দেওয়া হবে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা। অপমান, অপদস্থ এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কর্মকর্তা বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধাও পাবেন। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা পদদোন্নতিসহ নানা ভাবে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে গেছেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে গঠিত কমিটি এ সুপারিশ করেছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান সাবেক অর্থ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প পরিচালক মো. জাকির আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, আমরা এক হাজার পাঁচশ অফিসারের বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্ষতিপূরণের জন্য সুপারিশ করছি। বাকিটা সরকার দেখবে। কতজনকে সচিব হিসাবে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেছেন এমন প্রশ্নে জাকির আহমেদ খান বলেন সঠিক করে বলতে পারছি না। তবে অনেকেই যোগ্য কর্মকর্তা এবং তাদের সচিব হিসাবে পদোন্নতি না দেওয়া অন্যায় ছিল। তিনি আরও বলেন, সময়মতো সরকারকে সুপারিশ করতে পারছি এটাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

ইতঃপূর্বে মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি। তাদের অনেকে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পদমর্যাদা এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। অনেকে কোটি টাকার উপরে ক্ষতিপূরণ পাবেন বলেও জানান তিনি। সিনিয়র সচিব আরও বলেন, তাদের বিষয়টিও দ্রুত সমাধান হয়ে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একশজনের কমবেশি সচিব মর্যদা দেওয়া হবে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মতো করেই তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তাদের এজেন্সি প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর), এসিআরে প্রাপ্ত নম্বর, সার্ভিস রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভাগীয় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের (এটি) মামলা এবং শৃঙ্খলার মামলা আছে কিনা তা যাচাই করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ একটি এসএসবিতে যা কিছু দেখা হয়, সেভাবে যাচাই-বাছাই করে তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা সার-সংক্ষেপ আকারে যাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পর জিও জারি হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত আদেশ জারির প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যারা কোনো কারণ ছাড়াই পদোন্নতিসহ নানাভাবে বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে গেছেন, তাদের মধ্য থেকে যোগ্য, সৎ, শারীরিকভাবে সক্ষমদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অবস্থা ভালো নয়। সাড়ে ১৭ বছরে অধিকাংশ কর্মকর্তা দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের আর যাই থাকুক দেশপ্রেম নেই। তারা জনসেবার চেয়ে দলীয় তাঁবেদারি বেশি করেছেন।

সরকারের আশকারায় কর্মকর্তাদের অধিকাংশই বিপথগামী হয়েছেন। তারা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের অনেকেই গণহত্যার সমর্থক। অনেকেই দেশে-বিদেশে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তাদের দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ। সেই ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়ে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের সেবা নেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *