রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান বলেছেন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে ‘যত দোষ নন্দ ঘোষে’ পরিণত করা হয়েছে। অনলাইনে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে আসিফ নজরুল সম্পর্কে সম্প্রতি তোলা বিভিন্ন অভিযোগ বিশ্লেষণ করেন।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগের কথা। একটা টিভি টকশোতে গেছি। সেখানে একজন সুপ্রিম কোর্টের স্বনামধন্য লয়ার ছিলেন। মারাত্মকভাবে ড. আসিফ নজরুলের সমালোচনা করছিলেন। বাংলাদেশে যত সংকট সমালোচনা হচ্ছে সব ড. আসিফ নজরুলের। বলি না, যত দোষ নন্দ ঘোষ। নজরুলকে নন্দ ঘোষে পরিণত করা হয়েছে, করার চেষ্টা এটলিস্ট হচ্ছে।
‘দীর্ঘদিন থেকে , ইনফ্যাক্ট শেখ হাসিনার পতন এবং পলায়নের পর থেকে চেষ্টা ক্রমাগত চলছে। যাই ঘটুক না কেন যেমন কিছুই হোক না কেন সরকার কেন এমন হলো? অমন হলো না? কেন এটা করা হলো? কেন ওটা করা হলো না? কেন এ উপদেশটা হলো? কেন সে উপদেষ্টা হলো না? মানে যেকোনো রকম প্রশ্ন যদি আসে তার উত্তর কি আসিফ নজরুল ‘কেষ্টা ব্যাটাই চোর’। এটা বাড়তে বাড়তে এমন একটা পর্যায়ে গেল যে এটা আর এখন কোন সীমা কোনদিকে কেও রাখছে না।’
তিনি বলন, আমি আমার ওই টকশোতে সেই লইয়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম অন রেকর্ড যে, কিসের ভিত্তিতে তিনি আসলে এই কথাগুলো বলছেন। ঘটনাচক্রে সেদিনই একটা অনুষ্ঠানে জনাব আসিফ নজরুলের সাথে আমি ছিলাম এবং সেখানে তিনি তাকে নিয়ে অনেকগুলো আলোচনা-সমালোচনা ও প্রোপাগান্ডার জবাব দিয়েছিলেন। আমি সেখানে তাকে সেগুলো উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু যেটা হয় আমরা তো আসলে বুঝতে চাই না বোঝার জন্য এটা করছি না এই জিনিসটা যে কেউ ভুল বুঝে করছেন তা না।
‘আমরা দুটো টার্ম নিশ্চয়ই খেয়াল করি, জানি। একটা হচ্ছে মিস ইনফরমেশন। জনাব আসিফ নজরুলকে নিয়ে যা করা হচ্ছে এটা কোনটাই মিস ইনফরমেশন না, এগুলো প্রত্যেকটা ডিসইনফরমেশন। জেনে শুনে বুঝে মিথ্যা তথ্য তাকে নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে, উদ্দেশ্য আছে । উদ্দেশ্য কী আছে, সেটা আমরা অনেকে রাইটলি আইডেন্টিফাই করেছি। আমি একটু কথা বলতে চাই সেই জায়গায়। সম্প্রতি আবার তাকে নিয়ে আরো বহু কিছু বানিয়ে দেয়া হয়েছে সেটার কিছুটা জবাব জনাব আসিফ নজরুল দিয়েছেন।’
ডা: জাহেদ বলেন, উনি একটা অনুষ্ঠানে ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি কিছু কথা বলেছেন, সেটা বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে এসেছে। আমি সেখান থেকে একটু পড়ি। ভিডিও পাওয়া যায় আপনারা দেখে নিবেন। আমাদের কাজের সমালোচনা করবেন সমস্যা নেই ।আসিফ নজরুল বলছেন কিন্তু যখন সম্পূর্ণ আজগুবি মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হরণ করা হয় তখন মনে হয় সমালোচনাটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা, এই সরকারকে শক্তিহীন করা, আন্দোলনকারী মানুষের মধ্যে অনৈক্য নিয়ে আসা, দেশকে অস্থিতিশীল করা। পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অভিপ্রায় এগুলো করা হয়।
‘আমাদের এক প্রতিবেশী দেশের স্ক্রিপ্ট আছে না! শেখ হাসিনা চলে গেলে আর কেউ দেশ চালাতে পারবে না অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে। তার কোন বিকল্প নেই। এই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার চেষ্টায় নেমেছে কিছু মানুষ। খুব মন দিয়ে খেয়াল করুন। প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে সঠিক বলে আমি বিশ্বাস করি। গঠনমূলক পরামর্শ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করে নিজেরা নিজেদের কুৎসা রটায় চরিত্র হন করি, মিথ্যা তথ্য দেই তাহলে ছাত্রজনতার আত্মবলিদানের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হয়।’
ডা: জাহেদ আরও বলেন, তিনি নিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার নিয়ে বলছেন যে, অভিযোগ নেই। কিন্তু যাতে সত্য বলা হয় সেই প্রসঙ্গে বলছেন। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের অবদানের কথা তিনি বলছেন। ইনফ্যাক্ট সম্প্রতি তাকে নিয়ে যখন কথাবার্তা হয়েছে তখন তিনি বলছেন ৫ আগস্টের আগে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ সম্পর্কে আসিফ তারা ফেসবুকে কোন পত্রিকার রিপোর্টকে সবচেয়ে বেশি কোট করতেন আপনারা খুলে দেখেন। এখন যদি ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে আমি কি জুলাই আগস্ট গণভ্যুত্থানের ভূমিকা দেখবো না? গত ১৫ বছরের ভূমিকা দেখবো না? অবশ্যই আমার প্রতিবাদের ভাষা থাকবে। অবশ্যই প্রতিবাদ করব। কোন পত্রিকার কোন কিছু পছন্দ নাহলেই বলব, বলিষ্ঠ ভাবেই বলব। কিন্তু তাকে তো আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শত্রু বানাতে পারি না।
তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ করলাম খুলে দেখেন। ওই আন্দোলনে যারা বড় বড় ছিলেন কোন পত্রিকার লেখা বেশি কোট করেছেন প্রথম আলো, ডেলিস্টারের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম আলোর কথা এখানে বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম আলোকে নিয়ে কি হয়েছে দেখেছেন। আমি আমার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই শেয়ার করব এরপর তাকে আরো নানান কথাবার্তা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, সেটা হচ্ছে তিনি তিন থেকে পাঁচ তারিখ এটা খুবই ইন্টারেস্টিং নাকি সেনানিবাসে বসে সেনানিবাসে বসে তিনি ভারতে র র’য়ের এজেন্ট এবং বাংলাদেশের ভারতীয় দালালদের সাথে বসে তিনি নাকি ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছেন। কিভাবে বাংলাদেশকে আবার শেখ হাসিনা চলে গেলেও কিভাবে ভারতের হাতেই কার্যত রেখে দেয়া যায় এই ধরনের উনি উনার বক্তব্যে এটা বলেছেন।
ডা: জাহেদ বলেন, উনি (আসিফ নজরুল) এখানে তিন তারিখ কি করেছেন চার তারিখ কি করেছেন আমি একটু আপনাদেরকে জানাই। উনি তিন তারিখ ওখানে মাহবুব মোরশেদ ছিলেন তিনি সহ শহীদ মিনারে প্রোগ্রাম করেছেন। এরপর তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসরের বাসায় গেছেন সেই ভাসা কোথায় কত নাম্বার বাসা কোথায় বাসা সবকিছু বলছেন। চার তারিখ তিনি ক্লিয়ারলি জানিয়েছেন, উনি একটা বহু বিদেশে থাকা বহু মানুষের সাথে তিনি থেকেছেন একটা ওয়েবিনারে। সেই ওয়েবিনারে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। উনি বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। এইসব কিছু খুব ক্লিয়ারলি বলেছেন তিনি।
‘আমাদের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ জনাব ফাহাম আব্দুস সালাম এটা নিয়ে কথা বলেছেন ড. আসিফ নজরুলকে এই ধরনের ভিলেইন বানানোর চেষ্টা নিয়ে। চার তারিখ নিয়ে ফাহাম ভাই যেটা বলছেন আমি একটু পড়ি। আসিফ নজরুল চার তারিখ রাতে আমাদের সাথে হাজার হাজার মানুষের সাথে জুম মিটিং করছিলেন ।প্র্যাকটিক্যালি উনি জীবন ভিক্ষা করছিলেন এখন শুনি। উনি নাকি ওই রাতেই ইন্ডিয়ানদের সাথে গোপনে প্ল্যান করছিলেন। আর সব যদি ইন্ডিয়ানদের প্ল্যানেই হয় তাহলে জুলাই বিপ্লবকে বিপ্লব বলেন কিভাবে? তার মানে আমরা বুঝতেই পারছি ফাহাম ভাই এটাকেও খুব স্ট্রংলি এনডোর্স করছেন এই ইউনিটটার কথা আমরা সবাই জানি অনেকেই জানি সো এটাও বলা হলো এবং শেষ পর্যন্ত তাকে আসলে বলতেই হয়েছে।’
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে ড. আসিফ নজরুল কেন নন্দ ঘোষে পরিণত হলেন। এখানে সরকারের যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা দেখছি বলে আমি মনে করি না। ড. আসিফ নজরুলের যদি এত প্রবলেম হয় এত খারাপ তিনি হয়ে থাকেন তাহলে তো আসলে তাকে সরকার থেকে বের করে দেয়া উচিত। তাকে বরখাস্ত করা দরকার। আর যদি সেটা না হয়ে থাকে আমরা সরকারের দিক থেকে এবং বিশেষ করে আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আমাদের ছাত্র সমাজের যারা প্রতিনিধি আছেন আমাদের সমন্বয়করা এবং তিনজন। দুজন সরাসরি সমন্বয়ক এবং ছাত্রদের সাথে সংশ্লিষ্ট আরেকজন উপদেষ্টা আছেন আমরা কি তাদের জায়গা থেকে এই প্রতিবাদ দেখছি? দেখছি না। আমরা অন্য সমন্বয়কদের দিক থেকে এই প্রতিবাদ দেখছি? দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, আসিফ নজরুল সমালোচনা হতেই পারে। পৃথিবীতে কোন মানুষ ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে না। তিনি ইভেন উপদেষ্টা হিসেবেও দেখলাম নিজের একটা ই ভালুয়েশন করতে গিয়ে উনি নিজেকে ১০ এ চার দিয়েছেন মানে চার আমরা ৩৩ এ পাশ, আগের সিস্টেমে ধরলে। কোন রকমে পাশ করেছেন সেটা বলা যায়। ৫০% দেননি তাকে। সো তিনি নিজেই স্বীকার করছেন তার ব্যর্থতার জায়গা আছে। এমনকি যে সময়টা বাংলাদেশের সরকার গঠিত হচ্ছে যে সময়টা তিনি বা তাকে সেনাবাহিনীর প্রধান ডেকে নিয়েছিলেন সেখানেও এই প্রসিডিউরাল কোন না কোন সমস্যা কি আছে কিনা সেটা দেখা যেতে পারে।
‘যারা দীর্ঘদিন শেখ হাসিনা রেজিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফর্মে লড়াই করেছি তাদের কাছে আসিফ নজরুল অতি পরিচিত মানুষ। বছরের পর বছর কনসিস্টেন্টলি কিভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন তার ইনটেলেকচুয়াল এবিলিটি দিয়ে এগুলো আমাদের সবার দেখা আছে, সবার জানে আচ্ছা । শেষে এসে তো রাজপথে ছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। ওই সময়গুলোতে উনি রাস্তায় থেকেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। বলতে পারি ভারতের হয়েই নাটকটা করেছেন।’
তিনি বলেন, আমি যা তা বলবো, যা তা করব, এ খুব ভয়ংকর চর্চা । শুরুর দিকে বলছিলাম আসিফ নজরুল কেন টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। রাইটলি আমরা অনেকেই এটা দেখেছি যে, তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সেন্ট্রিস ফোর্স । এই সরকারে বিভিন্ন রকম ফোর্স বিভিন্ন রকম মিক্সচার আছে। একটা সেন্ট্রিস্ট ফোর্স। একটা সেন্ট্রিস্ট মানসিকতার মানুষ এই সরকারে আছেন তাকে সরিয়ে দিতে পারলে অনেকের অনেক রকম এজেন্ডা ফুলফিল করা যেতে পারে। এটাই রাইটলি অনেকে আইডেন্টিফাই করেছেন এন্ড আমি যুক্তিটাকে সঠিক একেবারেই সঠিক বলে মনে করি। সেই বিবেচনাতেই আমাদের মনে হবে ড. আসিফ নজরুলকে এই উপদেষ্টা পরিষদে থাকতে হবে এবং তার জায়গা থেকে আমাদের অন্তত যারা সেন্ট্রিস্ট মানসিকতার মানুষ আছি তাদের তাকে সমর্থন করা উচিত হবে। সেই সমর্থনটা হচ্ছে কিন্তু সরকারের দিক থেকে এবং আমাদের ছাত্রদের দিক থেকে আমি তার প্রতি যথেষ্ট সমর্থন দেখি না ।
‘তারা যদি মনে করেন তারা যদি ট্রুলি বিশ্বাস করেন ডক্টর আসিফ নজরুল ভারতের দালাল তিন থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত উনি যাবতীয় ফিরিস্তি আছে উনি চক্রান্ত করেছেন উনি তাকে কি মিথাইয়া সাজিয়ে নিয়ে গেছেন নানান রকম অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে আসিফ নজরুলকে এখনই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। আর যদি না হয় এই সংকটময় সময়ে এই মানুষটার পাশে তাদের প্রকাশ্যে দাঁড়াতে হবে। বিশেষ করে সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টা যারা আছেন তারা তার সমর্থনে মাঠে আসা খুবই জরুরী।’
সবশেষে ডা: জাহেদ বলেন, আর একটা কথা আমরা সবসময় মনে রাখবো। শেখ হাসিনা পতনের পর আমাদের কতগুলো রেডিকাল চিন্তা কতগুলো এক্সট্রিমিস্ট চিন্তা মাঠে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বিপ্লবের নামে। সেজন্য প্রথম থেকেই এই বিপ্লব শব্দটাকে কন্টেস্ট করেছি অনেকেই করেছেন। এর মধ্যে আমি কনসিস্টেন্টলি করে গেছি। সেই চেষ্টা বিফল হওয়ার পর এই এক্সট্রিম অ্যাটিটিচিউড গুলো আরো বাড়বে। আমরা যেন সামনে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে সতর্ক থাকি।
Leave a Reply