জাপানেঃ এবার সাপ্তাহিক ছুটি ৩ দিন হতে যাচ্ছে!

সরকারি চাকরিজীবীদের সাপ্তাহিক ছুটি তিন দিন হতে যাচ্ছে জাপানে। কর্মীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার জানিয়েছে, কর্মজীবী মায়েদের সহায়তার পাশাপাশি তলানিতে পৌঁছানো রেকর্ড নিম্ন জন্মহার বৃদ্ধির সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

আগামী বছরের এপ্রিল থেকে এই সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছে টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মা বাবাদের জন্যও বিশেষ সুবিধা চালু করার কথা জানিয়েছে জাপানি কর্তৃপক্ষ।

টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মা-বাবা আংশিক বেতন কাটছাঁটের মাধ্যমে দ্রুত অফিস ত্যাগ করার সুযোগ পাবেন।

টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে বলেন, ‘আমরা কাজের ধরন পর্যালোচনার মাধ্যমে এমন ব্যবস্থা নেব যাতে কেউ তাদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য না হন।’

এ ছাড়া জন্মহার বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে পুরুষদের পিতৃত্বকালীন ছুটিও বাড়িয়েছে জাপান সরকার। তবে অনেক সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের নিম্নগতির জন্য দায়ী।

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছর জাপানে প্রজনন হার ১.২ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে ২.১ শতাংশ জন্মহার থাকা প্রয়োজন। গত বছরে দেশটিতে মাত্র ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৭৭ শিশুর জন্ম হয়েছে।

জাপানের স্বস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কারণে জাপানের কর্মীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। তাই কর্মঘণ্টা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাপান সরকার।

দেশটির সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জাপানের কঠোর কর্মসংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় জন্মহারের নিম্নগতির জন্য দায়ী।

অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা দীর্ঘদিন ধরে জাপানের কর্পোরেট সংস্কৃতির একটি সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে কর্মীরা প্রায়ই স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হন এবং চরম ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হয়—অতিরিক্ত পরিশ্রমে এ মৃত্যুকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘কারোশি’।

এছাড়া, নারীরাও প্রায়ই ক্যারিয়ার এবং পরিবারের মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য হন, আর জাপানের ওভারটাইম কাজের সংস্কৃতি এই পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তোলে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, জাপানে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এখনও প্রবল। গত বছর দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৫ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭২ শতাংশ।

পশ্চিমা দেশগুলোতে চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি কর্মীদের উৎপাদনশীলতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তবে জাপানের জন্য এটি এখনো মৌলিক একটি ধারণা। দেশটির অনেক কোম্পানি কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করা সময়কে আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে দেখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *