ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা যে বিবৃতি দিচ্ছেন, তা ভারত সরকার সমর্থন করে না। এটি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে একটি ক্ষুদ্র প্রতিবন্ধক।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ব্রিফিংয়ে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনাকে ভারত সমর্থন করে না। এটি (হাসিনার বক্তব্য) বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই ছোট বা তুচ্ছ বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেবল একটি একক রাজনৈতিক দল বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের জনগণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ভারত।
চলতি বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপরও হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এ নিয়ে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে।
এমন অবস্থায় সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফর করেন। তার ঢাকা সফর থেকে ফেরার দুইদিন পর তিনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। বুধবার নয়াদিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ব্রিফিংয়ে দেশটির ২১ থেকে ২২ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, শেখ হাসিনা তার ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগের ডিভাইস’ ব্যবহার করে এসব বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে চলেছেন এবং ভারত সরকার তাকে এমন কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুবিধা প্রদান করছে না যা তাকে ভারতের মাটি থেকে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ দেয়। তিনি দাবি করেন, অন্য দেশে হস্তক্ষেপ এড়ানোর জন্য ভারতের ঐতিহ্যবাহী যে রীতি রয়েছে, এটি তারই অংশ।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির এমন মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে প্রায় নানা ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন হাসিনা।
বিক্রম মিশ্রি কমিটিকে জানান, সোমবার ঢাকা সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয় এবং যেকোনো সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য ও যোগাযোগের বৃহত্তম অংশীদার। সাম্প্রতিক বছরে দুই দেশ রেল যোগাযোগ, বাস সংযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ নির্মাণ করেছে।
বিক্রম মিশ্রি কমিটিকে আরো জানান, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেলসেবা স্থগিত রয়েছে। তবে তার সফরের পরে দুই দেশের সম্পর্কের স্পষ্ট উন্নতি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বৈঠকের পরে কমিটির চেয়ারম্যান শশী থারুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটি একটি খুব ভালো সভা ছিল। আমরা এই বিষয়ে সংসদে রিপোর্ট করব। এটিকে একটি খুব ভালো সূচনা হিসেবে বলা যায়।
Leave a Reply