বাংলাদেশ এখনো ভারতের উপর কতটুকু নির্ভরশীল এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত উঠছেই। একপক্ষ বলছে, ভারতের সহায়তা ছাড়া অচল হয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। আরেক পক্ষ বলছে, ভারত যা দেয় তা পাকিস্তান, তুরস্ক বা অন্যদেশও দিতে পারবে। মোটকথা, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের এই ত্রিভূজ সম্পর্কের রেশ কোথায় গিয়ে ঠেকে তা দেখার বিষয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দেশে দুটির মধ্যে বৈরিতা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কেও। সবশেষ ইসকন ইস্যুতে কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে ভারত। সরাসরি না বললেও দেশটির ক্ষমতাসীন নেতারা বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। উগ্রপন্থীরা বিক্ষোভ করে কোথাও কোথাও বন্ধ করে দিচ্ছে স্থলবন্দরের কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হচ্ছে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ কি পণ্য আমদানিতে ভারতের উপর এতই নির্ভরশীল? গণঅভ্যুথানের পর থেকে সংখ্যালঘু ও ইসকন ইস্যুতে ভারতীয় গণমাধ্যমে নানা ভুয়া তথ্য ছড়ানোসহ বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায়। ভারতের এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার। ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছিলো দেশের আনাচে-কানাচেতে। দেশের জনগণের মত, ভারতের উপর নির্ভরশীলতা থেকে বের হতে হবে, ভারতের বিকল্প খুজতে হবে।
এরমধ্যে পাকিস্তান থেকে ২৫ হাজার টন উচ্চমানসম্পন্ন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে ভারতের কাছ থেকে চিনি কিনতো বাংলাদেশ। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পাকিস্তানের পণ্যবাহী কন্টেইনার জাহাজ এসেছে গত নভেম্বরের মাঝামাঝি। বাংলাদেশের সাথে জটিল কখনো কখনো উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল পাকিস্তানের। ইতিহাস ও রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত থাকলেও নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন নতুন সম্ভাবনাকে হাতছানি দিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, গার্মেন্টস, ঔষধ ও লেদার এসব ক্ষেত্রে পাকিস্তানে রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে, অন্যদিকে সিলিং ফ্যান, ফ্রুটস,জুস, নারী পোশাক বাংলাদেশে জনপ্রিয়। কস্ট বেনেফিট হিসাব করে আমদানি-রপ্তানির পণ্য ঠিক হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাজিল থেকে গম, চিনি, মাংস এবং শুকনো ফল আমদানি করে বাংলাদেশ। মালেশিয়া থেকে ভোজ্যতেল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, দুগ্ধ পণ্য এবং রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য, চামড়াজাত পণ্যসহ জাপান থেকে হয় গাড়ি, শিল্পের যন্ত্রপাতি। এছাড়াও পাকিস্তান নিত্যপণ্য রপ্তানি শুরু করলে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা একদম কমে আসবে। সুতরাং বাংলাদেশ যে শুধুমাত্র ভারতের উপর নির্ভরশীল নয় তা বলাই যায়, আর অন্যান্য দেশ যেমন- পাকিস্তান, মালেশিয়া বাংলাদেশের চাহিদা পূরণে সক্ষম বলেও ধরে নেওয়া যায়।
Leave a Reply