৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতনে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভনে ভারতে পাচার করা হচ্ছে চট্টগ্রামের তরুণীদের। এরপর সেখানে বন্দি করে বিভিন্ন হোটেলে যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট নারী পোশাককর্মীরা, এমনকি পাচারে সহযোগিতাও করেন নারীরাই। প্রথমে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, এরপরই দেখানো হয় প্রলোভন। এতে সহজেই ফাঁদে ফেলা যায় ভুক্তভোগী তরুণীদের।
সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ভারতের বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসা এক তরুণী। তার মতে, দেশটির ঝারখণ্ড রাজ্যের রাঁচি শহরের একটি হোটেলে ২০ থেকে ২৫ বাংলাদেশি নারী পাচারের শিকার হয়ে যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।
চট্টগ্রামের এই তরুণী কাজ করতেন বায়েজিদ এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। সেখান থেকে বিউটি পার্লারে মোটা বেতনে চাকরির প্রলোভনে গত ২৯ মে তাকে যশোর হয়ে অবৈধপথে ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পাচার করে একটি চক্র। সেখানে একটি হোটেলে আটকে রেখে যৌনকর্মী হতে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন।
তবে কৌশলে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দিদশা থেকে দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এ তরুণী। বিভীষিকাময় সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠেন তিনি। জানান, পূর্ব পরিচয় সূত্রে সখ্যতা গড়ে পারভীন ও ঝুমু নামে দুই নারী তাকে পাচার করে ভারতে।
পাচারের শিকার নারী বলেন, আমি আপুকে বলেছি আমাদের তো পার্লারে কাজ দেওয়ার কথা ছিল। এখানে কেন এনেছেন, মিথ্যা কথা বলে আমাদের জীবন নষ্ট করছেন কেন। আমি আপনার এবং আপনার স্বামীর কথাও বিশ্বাস করেছি। তা নাহলে জীবনেও তো এখানে আসতাম না। আমাদের খুব গালাগালি করতো।
তিনি আরো বলেন, একদিন দেখি আমার বান্ধবী কীভাবে যেন পালিয়ে গেছে। তাকে আমি ওখানে খুঁজে পাইনি। পরে ঐ দিন রাতেই আমি ওখান থেকে পালিয়ে যাই। আমার মোবাইলও তারা নিয়ে নিয়েছিল। পরে আমি বিভিন্ন মানুষের থেকে সাহায্য নিয়ে আমার বাসায় যোগাযোগ করেছি।
শুধু এই তরুণী নন, তার সঙ্গে পাচারের শিকার হন বায়েজিদের কুলগাঁও এলাকার আরেক তরুণী। কিন্তু তার কোনো খোঁজ মিলছে না। তাকে ফিরে পেতে আকুতি জানিয়েছেন স্বজনরা।
পাচারের শিকার এক নারীর বাবা বলেন, আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছি যে কলকাতা কেন গেছে। সে আমাকে বলে একজন আপু বলে তাকে সেখানে নিয়ে গেছে। সেই নারী নাকি ওদের পার্লারে চাকরি দেবে। এই কাজে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে বলে তাকে বোঝানো হয়। পরে আমি আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া কীভাবে সেখানে গেল? সে জানায় তাদের অন্য রাস্তায় নিয়ে গেছে।
পালিয়ে আসা তরুণী থানায় মামলা করার পরই বেরিয়ে আসে আন্তর্জাতিক মানপাচার চক্রের তৎপরতার তথ্য। পুলিশ চক্রের অন্যতম সদস্য ঝুমুর স্বামী তারেককে আটক করে। পুলিশ বলছে, যেখানে পোশাক কারখানা বেশি সেসব এলাকায় পাচারকারী চক্রের শক্ত নেটওয়ার্ক আছে। তাদের টার্গেট এসব কারখানার নারী কর্মীরা।
মানবপাচার চক্রটির নেটওয়ার্ক চট্টগ্রাম থেকে যশোরসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় বিস্তৃত। ঘাটে ঘাটে রয়েছে তাদের সদস্য। পুরো চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব অসহায় নারীদের ভারতে পাচার করে। এই নারীরা প্রলোভনে পড়ে বিপদগ্রস্ত হন।
সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, যেসব এলাকায় পোশাক কারখানা আছে সেখানে গিয়ে সেমিনার করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি। এছাড়া নিয়মিত উঠান বৈঠকে আমরা এসব বিষয়ে সচেতন করি।
Leave a Reply