চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের ৫৫ বছর বয়সী ভ্যানচালক মিস্টার আলী নিজে উপার্জিত সামান্য অর্থ দিয়ে গ্রামের রাস্তা মেরামত করছেন। সম্প্রতি, নিজের বসতবাড়ি ভেঙে সেখানকার ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করার কারণে এখন তিনি গোয়ালঘরে বসবাস করছেন।
তবে তার মনেও কোনো আফসোস নেই। তিনি বলেন, “আমি রাস্তা বানিয়েছি, আমার ছেলে-মেয়ে আমাকে বকেছে। এখন তারা বাধ্য হয়ে আমাকে গরু গোয়ালঘরে রেখেছে, কিন্তু আমি খুশি, কারণ আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি।”
মিস্টার আলী রাস্তা মেরামতের জন্য নিজের অর্থে ইট কিনে, বস্তা কিনে এবং নিজে পরিশ্রম করেন। তার স্ত্রীর ভাষ্যমতে, তাদের বাড়ির একটি কাঁঠাল গাছ ছিল, যার ফল দিয়ে তারা খেতে পারতেন, কিন্তু মিস্টার আলী সেই গাছও বিক্রি করে রাস্তা বানানোর কাজে ব্যবহার করেছেন।
১২ বছর ধরে মিস্টার আলী রাস্তা মেরামত করে আসছেন, কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই। তার কাজের কারণে স্থানীয়রা তাকে “এমপি” বলে ডাকেন। তিনি জানান, আমি সরকারের কাছ থেকে কোনো বাজেট পাইনি। রাস্তা খারাপ থাকলে গাড়ি চলতে অসুবিধা হয়, মানুষ এক্সিডেন্টে আহত হয়।
এমন মহৎ কাজের জন্য স্থানীয়রা মিস্টার আলীকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। যদিও আর্থিকভাবে অসচ্ছল এই ভ্যানচালক, তার পরিবারও এই কাজের প্রতি খুশি। তবে, বর্তমানে তার থাকার কোনো ঘর নেই, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের কাছে তার জন্য একটি ঘর সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।
এলাকাবাসীরা বলেন, এত বড় কাজ করেছে মিস্টার আলী, শুধু আমরা নয়, গোটা উপজেলা বাসী তার জন্য গর্বিত। তিনি যেভাবে মানুষের উপকার করছেন, আমরা সরকারের কাছে তার জন্য একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এছাড়া, মনকষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাত হোসেন খুররম ও মেম্বার কাজল আলী মিস্টার আলীকে মানসিক ভারসাম্যহীন বা পাগল বলে দাবি করেছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই মিস্টার আলীর রাস্তা নির্মাণ কাজের সংবাদ প্রচার হওয়ার পর স্থানীয় এলজিইডি তাকে অস্থায়ীভাবে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেয়। সেখান থেকে যে বেতন তিনি পেয়েছেন, তাও রাস্তা মেরামতের কাজে ব্যয় করেছেন।
মিস্টার আলী বলেন, অর্থের অভাব থাকা সত্ত্বেও, আমি খুশি যে আমি মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি।
Leave a Reply