free tracking

৯ দফায় ছাত্রশিবিরের ভূমিকা কী ছিল, জানালেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ৯ দফায় ছাত্রশিবিরের কী ভূমিকা ছিল ছিল, সেটি পরিষ্কার করেছেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। আজ সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে এক দীর্ঘ পোস্টে ৯ দফার পেছনের গল্প তুলে ধরেন এই সমন্বয়ক।

জীবন বাজি রেখে সাতপাঁচ না ভেবে আন্দোলনের ক্রুশিয়াল মোমেন্টে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কালের কণ্ঠের পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

৯ দফা দেওয়ার সময় শিবিরের তৎকালীন ঢাবি সেক্রেটারির সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েকের মতো আলাপ-আলোচনা হয়, অনেক বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফাইনাল করা হয় এবং ওই দিন রাত ১২টা পর্যন্ত সব সাংবাদিককে আমি মেসেজ করে, ফোন দিয়ে ৯ দফা পৌঁছে দিছি।

আমার কাছে ক্যাম্পাসের সব সাংবাদিকের নম্বর ছিল, সবার কাছে পৌঁছে দিছি।
ইন্টারনেট ডাউন করে দেওয়ার কারণে সিম থেকেও মেসেজ ডেলিভারি হতো না, এক দফা এক দফা করে পাঠিয়েছি, ফোন দিয়ে আমি মুখে দফাগুলো বলছি, সাংবাদিকরা লিখে নিছেন, রেকোর্ড করে নিছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নম্বর আমার কাছে ছিল না, ওরা আমাকে নম্বর পাঠাইছে, আমি একেক করে সবাইকে মেসেজ দিছি। তারপর ফোন দিয়ে কনফার্ম করছি, এটা যে আমি আব্দুল কাদের।

তখন স্বাভাবিকভাবেই চাপ ছিল, আর সাংবাদিকরা তো কনফার্ম না হওয়া ছাড়া কোনো কিছু ছাপাবেন না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া নম্বর অন করতাম, সবাইকে কর্মসূচি পাঠাতাম, এভাবে চলতে থাকত রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এটা শুরুর দিকের কথা। কর্মসূচি আলাপ-আলোচনা করেই ঠিক হতো।

সাদিক ভাই আমাকে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কন্টাক্ট নম্বর দিতেন, তাদের আমি ফোন দিয়ে রিকোয়েস্ট করতাম, ৯ দফাটা আমার পক্ষ থেকে যাচ্ছে, আমি আব্দুল কাদের, আপনারা এটা নিয়ে একটু লেখেন…ক্যাম্পাসসহ সব মিডিয়া প্রতিনিধিরা জানেন ৯ দফার বিস্তারিত। প্রচারের ক্ষেত্রে শিবিরের অবশ্যই অবদান আছে, সেটা অস্বীকার করিনি। কিন্তু এভাবে পুরো ইতিহাস পরিবর্তনের নোংরা খেলায় শিবির মাতল কেন? আবু সাঈদসহ ৫ জন শহীদ হওয়ার পর ১৬ জুলাই রাতে আমরা অনলাইন মিটিং করে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে সামনের পরিকল্পনা ঠিক করি, একই সাথে সরকারের সংলাপের আহ্বানের প্রেক্ষিতে কিছু দাবিদাওয়া ঠিক করি। কিন্তু বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সেগুলা ফরমালি উপস্থাপন করা হয়নি। যখনই সিনিয়র কারো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, পরিস্থিতি বেগতিক, শিবিরের পক্ষ থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করা হলে, আমি আমাদের পূর্বের সেই রাতের দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে ফরমালি কিছু দাবি দিতে সম্মত হই।

শিবির প্রথম দফা দাবি দিয়েছিল, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি ওই পরিস্থিতি এবং সময়ের আলোকে সেটাকে সুইটেবল মনে করি নাই, এভাবে সরাসরি ছাত্রদের পক্ষ থেকে পদত্যাগের দাবি ওই সময়ে ওঠা সমীচীন মনে হয়নি আমার কাছে। কিন্তু শিবির নিজেদের অবস্থানে অনড়। একইভাবে আমিও। পরবর্তী আলাপ-আলোচনা শেষে পরিবর্তিত রূপ আসে। শিবির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দিয়েছিল, আমি শক্তভাবে অপোজ করছি, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে কাদের লাভ, সেটা তো আমি জানি। তারা এই দাবিতেও গোঁ ধরে ছিলেন। পরে আমার শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষিতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আসে। এই দুইটাই তো মেইন। বাকি দাবিগুলো কমন দাবি ছিল সবার, অনলাইনেও মানুষজন লেখালেখি করেছিল এমন দাবি নিয়ে।

আগস্টের কিছুদিন পরে ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক ভাই আমাকে গভীর রাতে অনেকবার ফোন দিলেন, দেখা করতেই হবে। ভোররাতের দিকে দেখা করলাম ভিসি চত্বরে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ হলো, একটাই কথা তার- তাদের সম্পর্কে আমি যেন কিছু লিখি। তারা ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কোথাও এক্সেস পাচ্ছে না। আমি না লিখলে হবে না। আমি লিখলাম, ইতিহাসের কাছে আমি দায়বদ্ধ থাকতে চাই না, কারো অবদানকে অস্বীকার করলে আমি ইহকাল এবং পরকালে দায়ী থাকব। যেহেতু আমি অনেক কিছু জানি, অনেক কিছুর অংশ ছিলাম, আল্লাহ সুযোগ করে দিছেন। জাগতিক পাওয়া না পাওয়া ঊর্ধ্বে গিয়ে অনেকে ‘না’ করা সত্ত্বেও লিখলাম। আমার লেখার পরে শিবিরের আলাপ সামনে আসে। শিবির বিভিন্ন জায়গায় দর-কষাকষির সুযোগ পায়। কিন্তু বিনিময়ে শিবির কী করল? আমাকে কখন কোথায় নাস্তা খাওয়াইছে, কখন গেঞ্জি কিনে দিছে সেটা প্রচার করতে লাগল। ৯ দফা নিয়ে তারা পুরা ইতিহাসই চেঞ্জ করে দিল!

শেখ হাসিনার পতন না হলে আমি আব্দুল কাদেরের কল্লা যাইত, শিবিরের সাদিক-ফরহাদসহ অন্য স্টেকহোল্ডার দাবিদারদের কিছুই হতো না। কারণ, তারা তো সবাই অদৃশ্য, আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে বেরই হতো না, ইভেন ফেসবুকেও একটা অক্ষর লিখে নাই। বলি হইলে আমি হতাম। হাসিনা ৩ জনকে পদ্মায় ডেকে নিয়ে ৮ দফা দিয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার ছক পুরাপুরি ফাইনাল করে ফেলছিল, সেই পরিস্থিতি ৯ দফা দিয়ে হাসিনার পুরা গেইম প্ল্যান ভেঙে দিলাম। আসিফ ভাই দুইবার ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাইছে, ছাড়া পাওয়া মাত্রই আমাকে ফোন দিছে, বারবার করে হুঁশিয়ার করে দিছে, সাবধানে থাকতে, আমাকে পাইলেই মেরে ফেলবে।

জীবন বাজি রেখে সাতপাঁচ না ভেবে আন্দোলনের ক্রুশিয়াল মোমেন্টে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলাম আর এখন এসব দেখা লাগতেছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *