এন্টিবায়োটিক এমন একটি ওষুধ, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিরাময়ে কার্যকর। তবে অনিয়ন্ত্রিত বা অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকেই সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলা ব্যথা হলে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন, যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আপনি কি নিশ্চিত যে, এন্টিবায়োটিক খেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন না? জেনে নিন এন্টিবায়োটিকের কিছু ক্ষতিকর দিক এবং এগুলো এড়িয়ে চলার উপায়।
প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া
শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, যা সাধারণ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে শরীর স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা বন্ধ করে দেয়। ফলে ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণের সময়ও শরীর সহজে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না।
এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়া
অনিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো ধীরে ধীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলে, যা ভবিষ্যতে একই এন্টিবায়োটিক দিয়ে সংক্রমণ নিরাময় কঠিন করে তোলে। এটি বিশ্বব্যাপী একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা, কারণ এর ফলে সাধারণ সংক্রমণও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
হজমজনিত সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি বৃদ্ধি
এন্টিবায়োটিক শুধু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস করে না, এটি শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও মেরে ফেলে। ফলে পেটের সমস্যা, গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া এবং বদহজম হতে পারে।
লিভার ও কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ
এন্টিবায়োটিক প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয় এবং এর বেশিরভাগ অংশ লিভার ও কিডনির মাধ্যমে পরিশোধিত হয়। দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ধীরে ধীরে এই অঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
অ্যালার্জি ও ত্বকের সমস্যা
অনেকের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক গ্রহণের ফলে ত্বকে চুলকানি, র্যাশ, ফুসকুড়ি কিংবা গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদি এন্টিবায়োটিক সেবনের পর শ্বাসকষ্ট, চুলকানি বা ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিছু এন্টিবায়োটিক মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু এন্টিবায়োটিক উদ্বেগ, হতাশা এবং মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করতে পারে। এটি সরাসরি মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
এন্টিবায়োটিক গ্রহণের সঠিক পদ্ধতি
শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন
নির্ধারিত কোর্স শেষ করুন, মাঝপথে বন্ধ করবেন না
ভাইরাসজনিত রোগ যেমন সাধারণ ঠান্ডা-কাশি, ফ্লুর জন্য এন্টিবায়োটিক সেবন করবেন না
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান, যা শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়া রক্ষা করে
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন
অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বন করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।
Leave a Reply