free tracking

কোন ভি’টামিনের অভাবে পা ফুলে যায়? জেনে নিন

পা ফোলা বা পায়ে পনি জমাসংক্রান্ত জটিলতায় আজকাল অনেকেই ভুগে থাকেন। অনেকের এত বেশি পা ফোলা থাকে যে জুতা ব্যবহার করতে কষ্ট পান কিংবা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। এই পা ফোলার (edema) পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিনের অভাব এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। যেমন–
ভিটামিনের অভাব ও পা ফোলার সম্পর্ক:

* ভিটামিন B1 (থায়ামিন) এর অভাব- এই অভাবে বেরি বেরি নামক রোগ হতে পারে, যা হার্ট এবং স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।

এর ফলে পা ফোলা, ক্লান্তি, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়, বিশেষ করে “wet beriberi”-তে।

* ভিটামিন B12 এর অভাব- এটি সরাসরি পা ফোলার প্রধান কারণ না হলেও, স্নায়বিক দুর্বলতা ও রক্তশূন্যতার কারণে শরীরে ফ্লুইড রেটেনশন হতে পারে।

* প্রোটিন ও ভিটামিন সমন্বিত অপুষ্টি (যেমন: ভিটামিন C ও প্রোটিন ঘাটতি)- ভিটামিন C এর অভাবে স্কার্ভি হতে পারে, যেখানে টিস্যু দুর্বল হয়ে পা ও অন্যান্য অঙ্গ ফোলতে পারে।

এছাড়া দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা পা ঝুলিয়ে রাখলে দুটো পা ফুলে যেতে পারে, বিশ্রাম নিলে ফোলা কমে যায়। বিশ্রামে থাকা অবস্থায় যদি পা ফুলে যায় সেটাকে ইডিমা বলা হয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. বোটেক বলেন, পানি ধরে রাখা এবং তার সাথে ফোলাভাব ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে, খাদ্যতালিকায় ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা সমাধান হতে পারে।

তবে পা ফোলার কারণ শুধুই ভিটামিনের অভাব নয়। কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডের অসুখ, থাইরয়েড সমস্যা, দাঁড়িয়ে কাজ করা, বেশি লবণ খাওয়া ইত্যাদিও কারণ হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট কারণ জানতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। দুটো পা যখন একসঙ্গে ফুলে যায় এবং আঙুল দিয়ে চাপ দিলে যদি গর্ত হয়ে যায় তাহলে নিচের রোগগুলোর কথা চিন্তা করতে হবে।

১. ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া : কিছু উচ্চ রক্তচাপের ও ব্যথার ওষুধ, স্ট্যারয়েড, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি কারণ হতে পারে।

২. অন্তঃসত্ত্বা নারী তৃতীয় ধাপে : শেষ তিন মাস পা ফোলা খুবই স্বাভাবিক, এক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার ও প্রস্রাবে এলবুমিন পরীক্ষা জরুরি।

৩. কিডনি রোগের কারণে পা ফোলা : প্রথমে মুখ ফুলে যায় তারপর শরীর ফুলে নেফ্রাইটিস রোগ প্রস্রাবের রং ঘন সরিষার তেলের মতো, কম প্রস্রাব ও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। নেফ্রোটিক সিনড্রোম পুরো শরীর ফুলে যায় এবং প্রস্রাবে অত্যধিক এলবুমিন বের হয়, ফলে প্রস্রাব ফেনা ফেনা হয়। কিডনি বিকল হলে প্রথমে মুখে, পরে পায়ে ও বুকে পানি আসে। এসব রোগীর রাতে বেশি বেশি প্রস্রাব, বমি বমি লাগা, খাবারে অরুচি দেখা দেয়।

৪. হার্ট ফেইলুর : উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত, হৃদযন্ত্রের ভাল্বের সমস্যা হলে, হার্টের মাংসপেশি দুর্বল হলে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যায়, ফলে পায়ে, পেটে, বুকে পানি আসে।

৫. লিভারের অসুখ : লিভার সিরোসিস হলে প্রথমে পেটে, পরে পায়ে ও বুকে পানি জমে। হেপাটাইটিস ভাইরাস বি ও সি, মদ্যপান, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে লিভার সিরোসিস হয়।

৬. অপুষ্টি : পরিমিত খাবার না খেলে, হজম না হলে, খাদ্যনালি থেকে আমিষ বের হয়ে যায় রক্তে এলবুমিন কমে যায়, ফলে শরীরে পানি জমে।

দুই পা ফোলা কিন্তু আঙুল দিয়ে চাপ দিলে গর্ত হয় না। এর অন্যতম কারণ-

১. হাইপোথাইরয়েডিজম : থাইরয়েড গ্রন্থির কাজ কমে গেলে মুখ ও পা ফোলা, দুর্বলতা, গলার স্বর পরিবর্তন অন্যতম লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে গলগ-, শীত শীত লাগা, মোটা হয়ে যাওয়া, মাসিকের রক্ত বেশি যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া ইত্যাদি।

কি খেলে পা ফোলা কমে?

পটাসিয়াম এই ফোলা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, কলা খাওয়া আপনার শরীরের অতিরিক্ত তরল হ্রাস করতে পারে এবং পায়ের ফোলা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

চিকিৎসা :

পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমানো। খাদ্যে পানি ও লবণের পরিমাণ কম খাওয়া। অধিক-ওজনের কারণে ফুলে গেলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করতে হবে। লিভার কিডনি ও হার্টের সমস্যা হলে বেশি ডোজে ডাইউরেটিকস দিতে হবে, পানি ও সোডিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাইপোথাইরয়েড হলে হরমোন রিপ্লেস করতে হবে। গভীর শিরা রক্তনালি ব্লক হলে অ্যান্টিকোগুলেন্ট ওষুধ দিতে হবে। টিস্যুতে সংক্রমণ হলে- অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। তাই এসব বিষয়েও আমাদের সবাইকে যত্নবান হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *