free tracking

ড. ইউনূস কি পদত্যাগ করতে চান!

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যান গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির এই আহ্বায়ক। তাদের মধ্যে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কথা হয়।

বৈঠকের বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, তারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তুর বিষয়ে নাহিদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি কাজ করতে এসেছেন, কাজ করার মতো পরিস্থিতি না থাকলে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি ভাববেন।

মুশফিক বলেন, সেসময় নাহিদ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জুলাইয়ের ত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধতা, তার উপরে পুরো দেশের মানুষের আস্থা এবং জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবিসি বাংলাকে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের তো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

নাহিদ বলেছেন, স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি… যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণঅভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার…। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারবো না। তো রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলোচনায় তিনি তার ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন।

কেন পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ?

একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে দেশের একটি জানিয়েছে, উপদেষ্টাদের সঙ্গে অনির্ধারিত আলোচনায় ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারছেন না। সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হয়নি। তাহলে তিনি কেন থাকবেন—এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি।

একটা পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের বলেন, তারা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা নিয়েও তিনি সংশয়ে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। অন্যদিকে ভালো নির্বাচন করতে না পারলে মানুষ তাকে দায়ী করবে বলেও আলোচনায় উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি বিভিন্ন পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে তুলে ধরার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। একপর্যায়ে তার ভাষণের একটি খসড়াও তৈরি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত ভাষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পরে আবার আলোচনা হতে পারে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। এরপর সাড়ে নয় মাস কেটে গেছে।

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানো নিয়ে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে বিরোধ তীব্র হয়েছে। দুই দলই রাস্তায় নেমেছে। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিএনপি উপদেষ্টা পদ থেকে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ চেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের নাম। এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা ‘বিএনপিপন্থী’ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।

সেনাপ্রধান ডিসেম্বরে নির্বাচন চেয়েছেন। তিনি নির্বাচিত সরকার থাকার গুরুত্বের কথা বলেছেন।

তাছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকমাসে বিভিন্ন দাবিতে সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার ইস্তফার ইচ্ছাপ্রকাশের ঘটনা সামনে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *