‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তার এই বক্তব্য নিয়ে খবর প্রকাশ করে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম। তবে দুই ঘণ্টা পরই ফেসবুক থেকে পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি।
তবে পরবর্তীতে শুক্রবার (২৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এতে তিনি দাবি করেন, প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে তার দেওয়া আগের পোস্টটি ছিল ব্যক্তিগত মতামত।
ওই পোস্টে ফয়েজ আহমদ বলেন, ডিসক্লেইমার, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এটাকে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। ধন্যবাদ সহ।ৰ
এর আগে শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে ফয়েজ আহমদ লিখেছিলেন, ‘অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনের জন্য ড. ইউনূস স্যারের দরকার আছে। বরং ক্যাবিনেটকে আরও গতিশীল হতে হবে। সরকারকে আরও বেশি ফাংশনাল হতে হবে, উপদেষ্টাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে, দৃশ্যমান অগ্রগতি জনতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে- এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। আমাদেরকে দেখাতে হবে যে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে জনতার সম্মতিতে ক্ষমতায় এসে প্রফেসর সাফল্য দেখিয়েছেন।বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সম্মান আছে, এটা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ এই বিশেষ সহকারী লিখেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সরকারকে এখন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনায় বসতে হবে, নিয়মিত বসে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত চাইতে হবে। কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতা কাম্য নয়।পাশাপাশি সেনাবাহিনীও রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব এবং আস্থার জায়গা- সেটা কেউ ভঙ্গ করবে না।’
তিনি লিখেছিলেন, ‘সব দরকারি প্রস্তুতি শেষ করে নির্বাচন এপ্রিল-মে’র মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে বলেই আশা করি। এ সময়ে সব যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে, করতে হবে জুলাই সনদ।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও লিখেছিলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ২৫ এ আমরা জাতীয়ভাবে দুই মাস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির উদযাপন করব, ইনশাআল্লাহ। এবং আগস্টের মধ্যেই স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচারের প্রথম রায়টি আলোর মুখ দেখতে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করি। ইনশাআল্লাহ আমরা হারবো না, আমাদের হারানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। প্রফেসর ইউনূস জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
তবে তার এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। পরে বিকালের দিকে ফয়েজ আহমদ আরেকটি পোস্ট দেন তার ফেসবুক পেজে। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। এটাকে নিউজ না করার অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে বৃহস্পতিবার রাত থেকে। ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পরে নাহিদের বরাত দিয়ে রাতেই বিবিসি বাংলা খবর প্রকাশ করে যে, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’। এরপরই শুরু হয় নানা আলোচনা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর অর্থ্যাৎ ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
Leave a Reply