অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবন ‘যমুনা’য় বৈঠকে বসে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এটি ছিল বিএনপি ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা।
বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদসহ চারজন নেতা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিএনপি জানায়, তাঁরা একটি লিখিত প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছিলেন এবং সেটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ড. মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আলোচনা করেছি তিনটি মূল বিষয় নিয়ে—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। এগুলোর মধ্যে কোনো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নেই। প্রত্যেকটি বিষয়ই আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার দাবি রাখে।”
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য বিএনপি শুরু থেকেই একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ চেয়ে আসছে। এই দাবির অংশ হিসেবে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
বিচার বিষয়ক আলোচনায় বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, এবং এই অন্যায়ের বিচার চাই তারা। তবে বিচার যেন স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়, সে বিষয়েও তারা গুরুত্ব দেন।
সংস্কার প্রসঙ্গে ড. মঈন খান জানান, “প্রধান উপদেষ্টা একমত হয়েছেন যে, জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।”
তিনি আরও জানান, নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি সময়সীমা নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে। “বিলম্বিত নির্বাচন জনগণের মাঝে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার শঙ্কা সৃষ্টি করবে,”—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে বিএনপি আবারও স্পষ্ট করে জানায়, তারা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেনি; বরং সরকারকে সহায়তা করতেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে ড. মঈন খান বলেন, “আজকের বৈঠকে কোনো নির্দিষ্ট আশ্বাস আমরা পাইনি। তবে আশা করছি, আমাদের লিখিত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”
বিএনপি নেতারা আরও জানান, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবি আবারও তোলা হয়েছে, কারণ এদের উপস্থিতি সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিএনপি আশাবাদ ব্যক্ত করে জানায়, দেশের শান্তি ও গণতন্ত্র রক্ষায় একটি নির্দলীয়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সরকার উদ্যোগী হবে এবং অচিরেই একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ জাতির সামনে আসবে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=x5tFK5zyi-I
Leave a Reply