আর মাত্র একটি ম্যাচ, তারপর থেকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে আর কখনও দেখা যাবে না আনহেল ডি মারিয়াকে। আগামীকাল ভোরে কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে মেসি-ডি মারিয়ারা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৬ বছরের এই ক্যারিয়ারে কতোই না স্মৃতি জমা হয়েছে। বিদায়বেলায় সেই সব স্মৃতি এসে নিশ্চয় কড়া নাড়বে ডি মারিয়ার মনের দরজায়।
দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ফুটবলের খোঁজ-খবরও যে তিনি রাখেন। ক্রিকেটার হলেও ফুটবলকে তিনি ভালবাসেন। আর দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে অনেক ভালবাসেন তিনি। তিনিও তো একজন খেলোয়াড়। তাই একজন খেলোয়াড়ের বিদায়ের মুহূর্তটা যে কতটা বেদনার, তা তো তিনি নিশ্চই বোঝেন। তাইতো আনহেল ডি মারিয়াকে নিয়ে দিলেন আবেগঘন বার্তা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাশরাফি লিখেন, ‘আনহেল ডি মারিয়া তার শেষ ম্যাচ খেলতে নামছে, স্বাভাবিকভাবে আর্জেন্টিনা দল চাইবে ট্রফি জিতে তাকে দারুণ একটা বিদায় দিতে। আনহেল কি করেছে আর্জেন্টিনার জন্য, তা চিন্তা করলে মনে হয় শুধু মেসির কারণে সে সবসময় চোখের আড়ালে থেকে গেছে। বেশি দূরে যেতে হবেনা, ২০১৪ বিশ্বকাপে তার ইনজুরির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এমন কি মেসিও ফাইনালে কিছুই করতে পারেনি, কারণ ডি মারিয়া মাঠে না থাকলে ডিফেন্ডারদের মেসিকে মার্ক করা কিছুটা সহজ হয়ে যায়। সেদিন ফাইনালে লাভেজ্জি তাও বেশ ভালো খেলছিলো, যে কারণে বেশ কিছু সুযোগ আর্জেন্টিনা তৈরিও করেছিলো, এমনকি লাভেজ্জির একটা ক্রস থেকে হিগুয়েন গোল করলেও তা অফসাইড হয়।’
সেদিন ডি মারিয়া মাঠে থাকলে ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারতো। এ বিষয়ে মাশরাফি আরও লিখেন, ‘হাফটাইমের পর কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়া লাভেজ্জিকে উঠিয়ে আগুয়েরোকে মাঠে নামালো স্রেফ বড় নামের কারণে। ব্যস আর্জেন্টিনার আক্রমণ শেষ হয়ে গেল। অথচো ডি মারিয়া থাকলে বিষয়টা পুরো ভিন্ন হতে পারতো। কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে গোল করা বা বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে গোল করা এগুলো বলাই যায়। তবে ডি মারিয়া ছাড়া মেসি বা আর্জেন্টিনা কতোটা দূর্বল তা বোঝার জন্য শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখলেই বোঝা যায়।’
২০২২ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে। সেই ফাইনালেও ডি মারিয়া গোল করেছিলেন। মাশরাফি লিখেছেন, ‘৭০ মিনিটের পর ডি মারিয়াকে উঠিয়ে নিলো স্কলানি, ব্যাস ফ্রান্স একের পর এক আক্রমণ শুরু করলো এবং দুই গোলই শোধ করে ফেললো। অথচ ডি মারিয়া মাঠে থাকতে ফ্রান্সকে মেসি এবং ডি মারিয়া দুজনকেই মার্কে রাখতে হচ্ছিলো, যার কারণে তারা অলআউট চাইলেও খেলতে পারছিলোনা। এমনকি আর্জেন্টিনা এই বিশ্বকাপে নক আউটে অলমোস্ট সব ম্যাচেই গোল খেয়েছে ডি মারিয়া মাঠ ছাড়ার পর। এমনকি ২০১৮ বিশ্বকাপে এই ফ্রান্সের কাছেই ৪-৩ গোলে হেরেছিলো, কিন্তু প্রথম গোল পেনাল্টিতে গ্রিসম্যান যখন দেয় ঠিক তার কিছুক্ষণ পর ডি মারিয়া ডি বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক রেইনবো কিকে সমতায় ফিরেয়েছিলো আর্জেন্টিনাকে।
ডি মারিয়ার বিদায়ে যে মাশরাফিও একটু কষ্ট পাচ্ছেন, তা তার কথাতে স্পষ্ট। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক আরও লিখেছেন, ‘এরকম অনেক অনেক দারুণ সব স্মৃতি সে মাঠে ছেড়ে যাচ্ছে, শুধু তাই না, মেসির পিক টাইমেই ডি মারিয়া ছাড়া মেসিকে অনেক ম্যাচ নিস্প্রান মনে হয়েছে। আর মেসির শেষ সময়ে যখন মেসি তার সেই গতি হারিয়েছে তখন ডি মারিয়া ছাড়া কি করবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলা উচিত যে এই দলটা অনেকটাই মেসি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছে। প্রায় ম্যাচেই অন্যরা গোল করছে এবং ভালোও খেলছে, স্কলানির সবচেয়ে বড় আবিস্কার সম্ভবতো এটাই।’
সবশেষ মাশরাফি লিখেন, ‘আনহেল ডি মারিয়া আপনাকে কুর্নিশ, একজন অন্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবলের সমর্থক হিসাবে। আপনি অবশ্যই গুরু দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি। আপনাকে ভোলা প্রায় অসম্ভব।’
Leave a Reply