free tracking

এক এনামুল সবাইকে বোকা বানিয়ে গেলেন! সত্যিটা জানলে মাথা ঘুরে যাবে!

ম্যাচের আগের দিন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে উইকেট দেখা বাংলাদেশের ক্রিকেটারটি কে জানেন? এনামুল হক। কোচ, অধিনায়কেরাও উইকেট দেখেন। কিন্তু এনামুল দেখেন অখণ্ড মনোযোগে, কখনো কখনো উইকেটের পাশে বসে আঙুল দিয়ে মাটি চেপে চেপে। বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিকদের সংগ্রহে এ রকম অনেক ছবি পাবেন, অধিনায়ক উইকেট দেখছেন, পাশে আছেন এনামুল।

কেন এনামুল এত মনোযোগ দিয়ে উইকেট দেখেন? ভাববেন না ছবির ফ্রেমে থাকার জন্য। উইকেট দেখে-বুঝে আসলে পুরো ম্যাচটাকে তিনি আগ থেকেই চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে চান। অগ্রিম বুঝে নিতে চান, এই উইকেটে কী কী ঘটনা ঘটতে পারে। ঘরোয়া ক্রিকেটের ড্রেসিংরুমে এনামুলের ক্রিকেটপ্রজ্ঞা ও অনুমানশক্তি তো এমনি এমনি তৈরি হয়নি। এটি অনেক দিনের পরিশ্রমের ফসল।

এনামুল আরেকটা কাজ খুব ভালো পারেন—মানুষকে ‘বোকা’ বানাতে। চলতি শ্রীলঙ্কা সফরে গলের পর কলম্বো টেস্টেও সেটি তিনি দেখিয়ে যাচ্ছেন, যা দলের বেশ কাজেও লাগছে। খেয়াল করে দেখেছেন নিশ্চয়ই, এনামুলের ব্যাটিং দেখাটা এখন বড়ই টেনশনের। প্রতি বলেই মনে হয়, এই বুঝি তিনি আউট হয়ে যাচ্ছেন! টেস্ট ম্যাচের শুরু থেকেই এমন ব্যাটিং দেখে ড্রেসিংরুমে দলের অন্য ব্যাটসম্যানদেরও ভড়কে যাওয়ার কথা। খুব কি ভালো বোলিং করছেন বোলাররা? নাকি উইকেট ‘আনপ্লেয়েবল’!

তবে এভাবে না ভেবে একটু উল্টো করে ভাবলে দেখবেন, এনামুল আসলে বোকা বানাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার বোলার-ফিল্ডারদের। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আজই যেমন মুখোমুখি হওয়া দশম বলে আউট হওয়ার আগে স্লিপে দুবার ক্যাচের মতো তুলে ফিল্ডাররা জায়গামতো দাঁড়িয়েছেন কি না, দেখে নিলেন।

এনামুলের যে ব্যাটিং দেখে দৃশ্যত আপনার ‘সংগ্রামী’ মনে হচ্ছে, সেটি কিন্তু গোপনে দলের উপকারই করছে। শ্রীলঙ্কান বোলারদের মিছে আত্মবিশ্বাসে ভুগিয়ে সহজ করছে সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের কাজ। সঙ্গে দর্শকেরাও বলে বলে পাচ্ছেন অনিশ্চিত ক্রিকেটের ভরপুর রোমাঞ্চ। টেস্ট ক্রিকেটে যখন এনামুলের ব্যাটিংয়ের মতো প্রতি বলের নাটকীয়তা চলে আসে, এর চেয়ে বিনোদন আর কী হতে পারে!

বিশ্বাস না হলে গল টেস্টের কথা মনে করে দেখুন। সেখানেও কি শ্রীলঙ্কান বোলার-ফিল্ডারদের কম ভুগিয়েছেন তিনি!

প্রথম ইনিংসে নিজের খেলা ষষ্ঠ বলেই তো এনামুল এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলতে নিয়েছিলেন তাঁদের। কড়া এলবিডব্লুর আপিল উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আম্পায়ার দেননি বলে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা রিভিউ নেওয়া নিয়ে সলাপরামর্শ শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত রিভিউটা নেননি বলে রক্ষা। নিলে বুঝতেন, এনামুল আসলে কী বোকাটাই না বানিয়েছেন তাঁদের।

বল প্যাডে লাগার আগে একদম হালকা করে তাতে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন এনামুল, যেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা বুঝতেই না পারেন, আসলে কী ঘটেছে। আসিতা-ধনাঞ্জয়ারা সেই ফাঁদে পড়েই তো এলবিডব্লুর আপিল করে বসছিলেন। পরে আসিতার বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়া এনামুল কোনো রান না করলেও লঙ্কানদের তাঁদের মাঠেই বিভ্রমে তো ফেলতে পেরেছিলেন!

গলে দ্বিতীয় ইনিংসেও শ্রীলঙ্কার বোলারদের মিছে আত্মবিশ্বাসে ডুবিয়ে নিশ্চয়ই মনে মনে হেসেছেন এনামুল। ৪ রান করে প্রবাত জয়াসুরিয়ার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন, কিন্তু তার আগের ১৯টি বলে এমনভাবে ব্যাট করছিলেন যেন শ্রীলঙ্কার বোলারদের মনে হয়, তাঁরা খুব ভালো বোলিং করছেন।

এনামুলের আউটটাকে তাই আত্মত্যাগ হিসেবে দেখা যায়। তাঁর ব্যাটিং দেখে নিজেদের বোলিংটাকে যথেষ্ট দারুণ ভেবেছিলেন বলেই না শ্রীলঙ্কার বোলাররা আরও বেশি ভালো বোলিং করার চেষ্টা করেননি। এ সুযোগে নাজমুল, সাদমান, মুশফিকরা কী চমৎকার ব্যাটিং করে গেলেন। এনামুলের মতো এ রকম কুশলী ক্রিকেটার আর পাবেন কোথাও? তবে কলাকুশলীদের কিছু সমস্যাও আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *