free tracking

পিতা যদি সব সম্পত্তি এক সন্তানকে লিখে দেন, তাহলে বাকি সন্তানদের করণীয় কী?

বাংলাদেশে একটি সাধারণ পারিবারিক ও সম্পত্তিগত জটিলতা হচ্ছে—পিতা জীবদ্দশায় সব সম্পত্তি একজন সন্তানকে লিখে দিয়ে অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করা। অনেকেই জানেন না, এই অবস্থায় বঞ্চিত সন্তানেরা আইনগতভাবে কী করতে পারেন। এই বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট শর্তে তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের প্রাপ্য অংশ ফিরিয়ে পেতে পারেন।

যদি পিতা ওসিয়তনামা করেন:
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে একজন ব্যক্তি মৃত্যুর আগে তার সম্পদের সর্বোচ্চ তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) ওসিয়ত করতে পারেন, সেটিও অন্য ওয়ারিশদের সম্মতিতে। যদি পিতা মৃত্যুর আগে পুরো সম্পত্তি একজন সন্তানকে ওসিয়ত করে থাকেন, তাহলে তা অবৈধ। বাকি সন্তানরা আদালতের মাধ্যমে ওসিয়তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের প্রাপ্য অংশ আদায় করতে পারবেন।

যদি সম্পত্তি সাদা কাগজে বা নন-রেজিস্টার্ড দলিলে লিখে দেন:
সাদা কাগজ, স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার বা শুধু নোটারি পাবলিক থেকে সত্যায়িত দলিল দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে, তা আইনগতভাবে বৈধ নয়। এ ধরনের দলিলের ভিত্তিতে কেউ জমির মালিকানা দাবি করতে পারে না। বঞ্চিত ওয়ারিশরা সহজেই এই ধরনের হস্তান্তর বাতিল করতে পারেন।

যদি জরিপে (খতিয়ানে) এক সন্তানের নামে নাম তোলা হয়:
অনেক সময় দেখা যায়, পিতা জীবদ্দশায় জরিপ চলাকালে একমাত্র পছন্দের সন্তানের নামে রেকর্ড বা খতিয়ানে নাম তুলিয়ে দেন। এতে তিনি মালিক হয়ে যান না। এটি একটি অবৈধ কৌশল, এবং অন্য ওয়ারিশরা চাইলে আদালতের মাধ্যমে ‘বাটোয়ারা মামলা’ করে তাদের অংশ ফিরিয়ে পেতে পারেন।

করণীয় কী?
১. ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করুন – সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।
২. সকল ওয়ারিশের নাম থাকতে হবে, কাউকে বাদ দিলে তা জাল হিসেবে গণ্য হবে।
৩. একজন দক্ষ সিভিল লইয়ারের মাধ্যমে বাটোয়ারা মামলা করুন।
৪. কোর্ট থেকে রায় পাওয়ার পর রেকর্ড সংশোধন ও নামজারি করে মালিকানা অর্জন করুন।

তবে ব্যতিক্রম:
যদি পিতা রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে জীবদ্দশায় সম্পত্তি কাউকে হেবা (দান), সাবকবলা (বিক্রয়) বা দান দলিল করে দিয়ে যান—তাহলে তিনি মালিক হিসেবে বৈধভাবে তা করতে পারেন, এবং তখন অন্য ওয়ারিশদের কিছু করার থাকে না।

পিতা তার জীবদ্দশায় যাকে খুশি তাকে সম্পত্তি দিতে পারেন, তবে সেটা আইনসঙ্গত উপায়ে হতে হবে। যদি কোনো ভুল বা বেআইনি পন্থায় অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তারা অবশ্যই আইনের সহায়তা নিয়ে নিজেদের প্রাপ্য ফিরে পেতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *