স্তন ক্যান্সার এমন এক রোগ, যেখানে স্তনের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। এটি সাধারণত নারীদেরই বেশি প্রভাবিত করে, তবে পুরুষরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সচেতনতা বাড়লেও, এখনো স্তন ক্যান্সার নিয়ে বহু ভ্রান্ত ধারণা সমাজে প্রচলিত। এসব ভুল ধারণা শুধু অপ্রয়োজনীয় ভয় বা দুশ্চিন্তার কারণ নয়, অনেক সময় চিকিৎসা পেতে দেরিও করে ফেলে রোগী। তাই সত্য তথ্য জানা ও জানানো জরুরি।
নিচে স্তন ক্যান্সার সংক্রান্ত ১০টি প্রচলিত ভুল ধারণা এবং বাস্তব সত্য তুলে ধরা হলো-
১. শুধু নারীরাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
ভুল: পুরুষরাও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন, যদিও এটি তুলনামূলকভাবে বিরল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে একজন পুরুষ হন। তাই যেকোনো লিঙ্গের মানুষ যদি স্তনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখেন, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. স্তন ক্যান্সার শুধু বংশগত রোগ।
ভুল: বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার রোগীর পরিবারে এই রোগের ইতিহাস থাকে না। জীবনধারা, বয়স ও পরিবেশগত নানা কারণে এই রোগ হতে পারে। তাই কেবল জেনেটিক ইতিহাস না থাকলেই নিশ্চিন্ত হওয়া ঠিক নয়।
৩. শুধু বয়স্ক নারীদেরই স্তন ক্যান্সার হয়।
ভুল: যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকি বাড়ে, তবে ২০ বা ৩০ বছর বয়সী তরুণীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। নিয়মিত চেকআপ ও স্তন সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
৪. ডিওডোরেন্ট বা আন্ডারওয়্যার ব্রা স্তন ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
ভুল: এ ধরনের দাবি কখনোই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিওডোরেন্ট বা আন্ডারওয়্যার ব্রার সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের কোনো সরাসরি যোগসূত্র নেই।
৫. স্তনে যেকোনো গাঁট মানেই ক্যান্সার।
ভুল: সব গাঁট ক্যান্সার নয়। অনেক সময় ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা বা সিস্টের মতো নিরীহ কারণে গাঁট হয়। তবে যেকোনো নতুন বা অস্বাভাবিক গাঁট চিকিৎসকের দ্বারা পরীক্ষা করানো উচিত।
৬. স্তন ক্যান্সার সবসময় ব্যথা দেয়।
ভুল: শুরুতে বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সারই ব্যথাহীন থাকে। হরমোন পরিবর্তন বা ব্রা চাপার কারণে ব্যথা হতে পারে, তবে ব্যথা না থাকলেও ক্যান্সার হওয়া সম্ভব।
৭. কেবলমাত্র সেলফ-এক্সামেই আগেভাগে ধরা পড়ে ক্যান্সার।
ভুল: যদিও নিজে নিজে পরীক্ষা করা উপকারী, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সেলফ-এক্সাম ক্যান্সার মৃত্যুর হার কমায় না। বরং ম্যামোগ্রাম বা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা বেশি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য।
৮. সার্জারি ছাড়া স্তন ক্যান্সার সারে না্
ভুল: অনেক রোগীকে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, হরমোন থেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমেও চিকিৎসা দেওয়া যায়। সবক্ষেত্রে মাস্টেক্টমি (স্তন অপসারণ) প্রয়োজন হয় না।
৯. খাবার বা হারবাল সাপ্লিমেন্টে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ বা নিরাময় সম্ভব।
ভুল: কোনো খাবার, হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা বিকল্প ওষুধ এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় যে, তা ক্যান্সার সারাতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ভালো, কিন্তু ক্যান্সার রুখতে মেডিক্যাল স্ক্রিনিং ও চিকিৎসাই কার্যকর।
১০. ম্যামোগ্রাম বিপজ্জনক, ক্যান্সার ঘটায়।
ভুল: ম্যামোগ্রামে ব্যবহৃত রেডিয়েশন অত্যন্ত কমমাত্রার এবং এটি নিরাপদ। বরং আগেভাগে ক্যান্সার ধরতে ম্যামোগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম, এবং তা জীবন বাঁচাতে পারে।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসার জন্য এই ধরনের ভুল ধারণা থেকে সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে। তথ্যভিত্তিক সচেতনতা এবং সময়মতো চিকিৎসাই এই রোগ থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর পথ।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
Leave a Reply