আমরা অনেক সময়ই এমন কিছু দম্পতিকে দেখে থাকি, যাদের চেহারায় এতটা মিল থাকে যে তাদের দেখে ভাইবোন মনে হয়। কেউ কেউ এ নিয়ে মজা করে মন্তব্যও করেন। আবার কেউ বিষয়টি বুঝেও গুরুত্ব দেন না। অথচ এই মিলের পেছনে রয়েছে বিস্ময়কর কিছু ব্যাখ্যা—বৈজ্ঞানিকভাবেও যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহও রয়েছে। এমনকি ইনস্টাগ্রামে ‘Siblings or Dating’ নামে একটি জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত আছে, যেখানে নানা যুগলের ছবি পোস্ট করে অনুসারীদের জিজ্ঞাসা করা হয়—তারা কি ভাই–বোন, নাকি প্রেমিক-প্রেমিকা বা দম্পতি? এই অ্যাকাউন্টের অনুসারীর সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, যে যুগলদের সবাই ভাই–বোন মনে করেন, তারা আসলে প্রেমিক বা স্বামী-স্ত্রী!
কেন দম্পতির চেহারায় আসে মিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে গবেষকদের দিকে তাকাতে হয়। টাইম ম্যাগাজিন তাদের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, দম্পতির চেহারায় মিল আসার পেছনে রয়েছে তিনটি প্রধান কারণ—
১. এমপ্যাথেটিক মিমিক্রি বা ভালোবাসার অনুকরণ
দাম্পত্য জীবনের শুরুতে হয়তো স্বামী-স্ত্রী দেখতে একে-অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলে দেখা যায়, তাদের মুখের গঠন, অঙ্গভঙ্গি এমনকি হাসির ধরণেও মিল এসেছে। গবেষকরা এই বিষয়টিকে বলেন “Empathetic Mimicry”। এর মানে, দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে একে-অপরকে অনুসরণ করতে করতে মুখাবয়বে পর্যন্ত মিল চলে আসে। এটি ভালোবাসা ও মায়ার শক্তিশালী প্রভাব।
২. একই রুটিন, একই অভ্যাস
একই ছাদের নিচে বাস করা দম্পতিরা সাধারণত একই রকম খাবার খান, একই ঘুমের রুটিনে অভ্যস্ত হন এবং একে-অপরের জীবনের অংশ হয়ে যান। এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে তাদের চেহারায় ও শারীরিক গঠনে মিল আনে। যেমন, যদি দুজনেই স্বাস্থ্যসচেতন হন তবে তাদের শারীরিক গঠন মিলবে। আবার দুজনেই নির্দিষ্ট ধরণের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে করতে তা চেহারার স্বাভাবিক রূপ হয়ে যায়।
৩. সঙ্গী নির্বাচনের সময় মিল খোঁজা
আমরা অনেক সময় নিজের চারপাশের বা পরিচিত গণ্ডির মধ্য থেকেই জীবনসঙ্গী নির্বাচন করি। যার ফলে আগে থেকেই কিছু মিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। একই অঞ্চলের, একই পেশার বা একই রুচির মানুষদের মধ্যে দম্পতি গঠিত হলে, চেহারার মিল থাকাটা বিচিত্র নয়।
তাহলে কত বছর একসঙ্গে থাকলে এমন হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, সাধারণত ২০-৩০ বছর একসঙ্গে বসবাসের পরে এই মিল স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ৫-১০ বছরের মধ্যেই পার্থক্যটা কমে যেতে দেখা যায়।
সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আগ্রহ
‘Siblings or Dating’ ইনস্টাগ্রাম পেজে প্রতিদিন হাজার হাজার যুগলের ছবি পোস্ট হয়, যাদের দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। সেখানে ছবি দেখে ব্যবহারকারীদের ভোট দিতে বলা হয়—এই যুগল কি ভাই–বোন, নাকি প্রেমিক-প্রেমিকা? ফলাফলে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবাই ভুল করে বসেন! আসলে তারা দম্পতি হয়েও একে অপরের মতো দেখতে।
দম্পতির চেহারায় মিল থাকা শুধু কাকতালীয় নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা। ভালোবাসা, অভ্যাস ও সময়ের প্রভাব একত্রিত হয়ে এমন এক মিল গড়ে তোলে, যা চেহারায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাই যদি কোনো দম্পতির চেহারায় মিল থাকে, তবে সেটাকে ভালোবাসার একটি প্রাকৃতিক রূপ বলাই যায়।
Leave a Reply