সচিবালয়ে ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরে এখনও ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা এবং তার আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের আধিপত্য বিরাজ করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শীর্ষ পর্যায়ের পদে সামান্য পরিবর্তন হলেও অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে হাসিনার সমর্থকরা রয়ে গেছেন। তারা গোপনে বৈঠক করে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন, যার ফলে ‘আমলা বিদ্রোহ’ ও আগামী নির্বাচনে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সিভিল প্রশাসনে ৪৬ জন সচিব ও অতিরিক্ত সচিব আছেন, যারা হাসিনার আস্থাভাজন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়। এছাড়া ১১ জন ওএসডি সচিব আছেন, যাদের অনেকেই ছাত্রলীগে সক্রিয় ছিলেন এবং এখন বিশাল অর্থসম্পদের মালিক হয়ে বিভিন্ন দায়িত্বে ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গণঅভ্যুত্থানের পর পদোন্নতির পর্যালোচনায় দেখা গেছে, হাসিনার অনুগত ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বেশি হয়েছে, যখন বঞ্চিত ও নিপীড়িত পেশাদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন এই অবস্থা সংশোধনের দাবি জানিয়েও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
সাবেক সচিব এএফএম সোলাইমান চৌধুরী বলেন, এসব আমলারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অবসরপ্রাপ্ত এক সচিবও বলছেন, সচিবালয় এখন দলীয় কার্যালয়ের মতো, যেখানে রাজনৈতিক আনুগত্যই মূল বিবেচ্য বিষয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছেন। তারা মৌখিক আদেশ দিয়েছেন, উপদেষ্টার সম্মতি ছাড়া কোনো পদায়ন বা প্রত্যাহার করা যাবে না। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করছেন।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান সালমান এফ রহমানসহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বহাল রয়েছেন। এছাড়া দোষীদের মধ্য থেকে অনেকেই পদোন্নতি পাচ্ছেন, যা সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পদোন্নতির আদেশ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সমর্থকদের অবহেলা করা হচ্ছে, আর যারা হাসিনার অনুগত তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply