‘দিন যায়, রাত যায় সবাইকে সামনে পাই, তামিমরে আর পাই না’

আমার তামিমরে ২০ বছর পাইলে মানুষ করছি। দিন যায়, রাত যায়। সবাইকে সামনে পাই, আমার তামিমরে আর পাই না। শিক্ষকদের সামনে ছেলের জন্য এভাবেই আহাজারি করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিমের মা রাজিয়া সুলতানা।

গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে চলা সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন তামিম। তিনি জবির গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শেওড়াপাড়ায় তামিমের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা ও এক মাসের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছিয়ে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. জি. এম আল-আমীন, সহকারী প্রক্টর গৌতম কুমার সাহা, বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও গণিত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, অধ্যাপক ড. মোস্তাক আহমেদসহ অন্য শিক্ষকরা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলের স্মৃতিচারণা করে আহাজারি করেন তামিমের মা।

বিলাপ করতে করতে তামিমের মা বলেন, ‘আমারে আর কে কইব, মা আল্লাহ আমাগের সব দেব, তুমি ধৈর্য ধরো। আমাদের টাকা-পয়সা হইব। আমার চারপাশে সবাই আছে।

আমার তামিম নাই রে, আমার তামিম নাই। আমি ২০ বছর পাইলে মানুষ করছি আমার তামিমরে, দিন যায় রাত যায় রে, আমি তামিম রে পাইনে।’
সান্ত্বনা দিয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান তার পরিবারকে বলেন, ‘আমরা তামিমের শূন্যতা অনুভব করছি। এ জন্যই আমরা সব শিক্ষক আপনাদের বাসায় চলে আসছি। আমরা বুঝি, একটা ছেলে বড় করতে কত কষ্ট হয়।

গতকাল আমরা ক্যাম্পাসের মসজিদে তামিমের জন্য দোয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম।’
জানা যায়, ঢাকায় তামিমের বাবা আব্দুল মান্নান মোটর মেকানিকের কাজ করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে থাকতেন মিরপুরের ১০ নম্বরের একটি ভাড়া বাসায়। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা তিন ভাইয়ের মধ্যে তামিম ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাইও বাবার সঙ্গে মেকানিকের কাজ করেন। ছোট ভাইয়ের বয়স ৫ বছর।

তামিমের বড় ভাই লামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুক্রবারে (১৯ জুলাই) দুপুরের পর বাইরে যাবে বলে আমার কাছে টাকা চায়। আমি দিই না। পরে তামিম মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বের হয়ে যায়। পরে জানতে পারি গুলিবিদ্ধ হয়েছে সে। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার ভাই আর নাই।’

পরিবার জানায়, ছোট থেকেই তামিম মেধাবী ও রাজনীতি সচেতন ছিলেন। ঢাকাতেই বেড়ে ওঠার কারণে ছিলেন অন্যদের থেকে ভিন্ন। স্কুলজীবন থেকেই যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয়েও যুক্ত হন শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য ভালো কিছু করার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. জি এম আল-আমিন বলেন, তামিমের পরিবারকে নগদ এক লাখ টাকা ও এক মাসের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বিভাগ ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *