free tracking

পেইনকিলার সেবনে কী কিডনির ক্ষতি হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ!

দৈনন্দিন জীবনে নানা কারণে আমরা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পেইনকিলার ওষুধ গ্রহণ করি। মাথাব্যথা, আঘাত, আর্থরাইটিস কিংবা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য এই ওষুধ অনেক সময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু দীর্ঘসময় ধারে বা অতিরিক্ত মাত্রায় পেইনকিলার সেবন করলে তা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো, কী ধরনের পেইনকিলার কিডনির জন্য ক্ষতিকর, কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, এবং কী কী লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হওয়া দরকার।

পেইন এবং পেইনকিলারের ধরন: যন্ত্রণা হতে পারে আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী। আকস্মিক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে আঘাত, অপারেশন বা গুরুতর জ্বর। আর দীর্ঘস্থায়ী যন্ত্রণা তিন মাসের বেশি সময় ধারে থাকতে পারে, যেমন আর্থরাইটিস, স্নায়ুর ক্ষতি, ক্যানসার বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে।

বাজারে প্রচুর ধরনের পেইনকিলার পাওয়া যায়। বেশিরভাগই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা যায়, যেমন অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলেনল), ওষুধের গ্রুপ এনএসএআইডি (যেমন ইবুপ্রোফেন, নাপ্রোক্সেন, ডিক্লোফেনাক)। এছাড়াও কিছুকিছু ওষুধের জন্য ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে, যেমন শক্তিশালী এনএসএআইডি, অপিওয়েড, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং কোর্টিকোস্টেরয়েড। কিছু পেইনকিলার বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ঝুঁকি বাড়ায়।

যেভাবে পেইনকিলার কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে: দীর্ঘ সময় ও অতিরিক্ত মাত্রায় কিছু পেইনকিলার কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে আঘাত করে, যা ধীরে ধীরে কিডনির ফাংশন কমিয়ে দেয়। এনএসএআইডি গ্রুপের ওষুধ এই ক্ষতির জন্য প্রধান অপরাধী। তারা কিডনিতে রক্তের প্রবাহ কমিয়ে দেয়, যা কিডনি আঘাত বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

অ্যাপিওয়েড সরাসরি কিডনি ফিল্টারকে ক্ষতি না করলেও, কিডনি সমস্যাযুক্ত রোগীদের মধ্যে এগুলো জমে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কোর্টিকোস্টেরয়েড সরাসরি কিডনি ক্ষতি না করলেও রক্তচাপ বৃদ্ধি, ফ্লুইড রিটেনশন এবং রক্তে সুগার বাড়িয়ে কিডনির ওপর চাপ বাড়ায়। একাধিক ওষুধের মিশ্রণ দীর্ঘদিন ব্যবহার করাও কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দৈনিক মিশ্রিত পেইনকিলার নেয়া উচিত নয়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে: কিডনি রোগী, মধ্যবয়স্ক ও তদূর্ধ্ব ব্যক্তি, হার্ট বা লিভার রোগী, রক্তচাপের ওষুধ সেবনকারী, অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত, যারা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন অথবা ডিহাইড্রেশন হয় এসব রোগীরা বেশি ঝুঁকিতে। যদিও স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরাও দীর্ঘমেয়াদি ও বেশি মাত্রায় পেইনকিলার নিলে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। কিডনি ক্ষতি প্রথম দিকে টের পাওয়া যায় না। পরে ক্লান্তি, প্রস্রাবে রক্ত, বারবার প্রস্রাব, পিঠে বা পাশের দিকে ব্যথা, বমি, পায়ে ফোলা এবং স্মৃতিভ্রংশের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিকার: সবচেয়ে জরুরি হলো ক্ষতিকারক পেইনকিলার ব্যবহার বন্ধ করা। ডাক্তাররা রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, ইমেজিং এবং প্রয়োজনে বায়োপসি করেন সমস্যার মাত্রা নির্ণয়ের জন্য। পানি খাওয়া বাড়ানো, ওষুধের ডোজ সামঞ্জস্য, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং বিকল্প ব্যথানাশক ব্যবহার চিকিৎসার অংশ। লক্ষ্য হলো কিডনির আরও ক্ষতি রোধ এবং বিদ্যমান কিডনি সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা।

ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি, কিন্তু পেইনকিলার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা আরও জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি বা অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবন কিডনির জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের ডোজ বা ব্যবহারে পরিবর্তন করবেন না। নিয়মিত শরীরের অবস্থা পরীক্ষা করিয়ে নিন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করুন, যাতে কিডনি সুস্থ থাকে এবং জীবনযাত্রা সুন্দর হয়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *