free tracking

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মানতে হবে যেসব শর্ত!

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি এই সনদে সরকার ও রাষ্ট্র কাঠামোতে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মেয়াদ সীমিত করার বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শনিবার (১৬ আগস্ট) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই খসড়া হস্তান্তর করা হয়। মূলত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরির উদ্দেশ্যে এই সনদটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য নতুন শর্ত:

‘জুলাই সনদ’-এর খসড়ায় প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে:

১. প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি একই সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না।

২. কোনো ব্যক্তি একটানা বা বিচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

এই প্রস্তাবগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ করা এবং গণতান্ত্রিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অন্যান্য সংস্কার:

৮৪টি প্রস্তাব এবং ৮ দফার একটি অঙ্গীকারনামা সম্বলিত এই খসড়ায় আরও বেশ কিছু যুগান্তকারী সংস্কারের কথা বলা হয়েছে:

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ: বর্তমান এক কক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদের পরিবর্তে একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংস্কার কমিশন: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কার আনার জন্য ছয়টি পৃথক কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো- সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন।

‘জুলাই সনদ’-এর খসড়াটি মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর প্রথম অংশে পটভূমি বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, গত ৫৩ বছরেও তা অর্জিত হয়নি। খসড়ায় বিশেষভাবে গত দেড় দশকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সংবিধানের বিকৃতি, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের দলীয়করণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই খসড়াটিকে দেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো এখন এই প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে তাদের চূড়ান্ত মতামত জানাবে, যার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা নির্ধারিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *