free tracking

ডাবের পানি সবার জন্য নয়, ৬ ধরনের মানুষের জন্য বিপজ্জনক!

ডাবের পানিকে নানা কারণেই সুপারড্রিংক বলা হয়। কম ক্যালোরি, ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ ও কাজ পরবর্তীতে হাইড্রেশনের জন্য কার্যকরী একটি পানীয় ডাবের পানি। এর রকমারি উপকারিতা রয়েছে। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো করা থেকে শুরু করে হজমে সহায়তাসহ নানা কাজে ভূমিকা রাখে ডাবের পানি।

একাধিক গুণে গুণান্বিত এই ডাবের পানি সবার জন্য কিন্তু উপযুক্ত নয়। এ কথা শুনে কিছুটা অবাক লাগলেও এটাই সত্য। শরীরের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য জটিলতায় ডাবের পানি খাওয়া এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা খাদ্য অ্যালার্জির মতো কিছু নির্দিষ্ট সমস্যায় ডাবের পানি উপকারের থেকে ক্ষতি করে বেশি। এ কারণে ডাবের পানি উল্লেখিত সমস্যার মানুষদের পান না করার জন্য বলা হয়। এ ব্যাপারে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাহলে জেনে নেয়া যাক-

ডায়াবেটিস রোগী:
ডাবের পানি শর্করা সমৃদ্ধ। সাধারণত প্রতি ২০০ মিলি ডাবের পানিতে প্রায় ৬-৭ গ্রাম শর্করা থাকে। যদিও এটি কম পাওয়া যায়, এরপরও এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীদের এই পানীয় রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যদি নিয়মিত বা বেশি পরিমাণে ডাবের পানি পান করা হয়। আবার যদি প্যাকেটজাত ডাবের পানি পান করা হয়, তাতে চিনি যুক্ত থাকার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে প্যাকেটজাত ডাবের পানি সুগার নিয়ন্ত্রণে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। এ রোগী হিসেবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডাবের পানি সীমিত পরিমাণ পান করা বা এড়িয়ে চলা উচিত।

অ্যালার্জি:
ডাবের পানিতে অ্যালার্জির বিষয়টি তুলনামূলক বিরল। এরপরও সংবেদনশীলদের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ডাবের পানি বা নারকেলভিত্তিক খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই অ্যালার্জির লক্ষণের মধ্যে―চুলকানি, ফোলাভাব, ত্বক লাল হওয়াসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, হজমে অস্বস্তি, এমনকি অ্যানাফিল্যাক্সিসের সমস্যাও হতে পারে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ডাবের পানিতে অ্যালার্জি থাকা শিশুদের প্রায় ৯০ শতাংশের ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়, আর ১০ শতাংশের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অ্যানাফিল্যাক্সিস দেখা দেয়

অন্য একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডাবের প্রোটিন শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিসের কারণ হতে পারে। এরপরও যাদের বাদামে আগে থেকেই অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। খাবারে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে তাদের ডাবের পানি পানের আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে।

কিডনি রোগী:
ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এটি শরীরে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগ বা কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ পটাশিয়াম গ্রহণ বিপজ্জনক। কিডনি যদি সঠিকভাবে পটাশিয়াম ফিল্টার করতে না পারে, তাহলে এটি রক্তে জমা হয়। এতে হাইপারক্যালেমিয়া হয়। ফলে পেশী দুর্বলতা, বমি বমি ভাব ও জীবন হুমকি পড়াসহ হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।

এ জন্য কিডনিজনিত কোনো রোগ থাকলে, বিশেষ করে মাঝারি থেকে গুরুতর পর্যায়ের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি পান করা যাবে না।

ঠান্ডা ও ফ্লুর সময় নয়:
আয়ুর্বেদসহ প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি মতে বিশ্বাস করা হয়, ডাবের পানি শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে। তবে এটি গরমে বা গ্রীষ্মকালে উপকারী। কিন্তু আপনার যদি সর্দি-কাশি বা ফ্লু থাকে, তাহলে ডাবের পানি পানে সমস্যা হতে পারে। এর শীতলভাব আপনার শ্লেষ্মা বাড়াতে পারে বা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে। এ জন্য ঠান্ডা ও সর্দি-কাশির সময় ডাবের পানি পান করা উচিত নয়।

আবার নাক বন্ধ হওয়া, গলা জ্বালাপোড়র মতো লক্ষণ থাকলেও ডাবের পানি শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঘন ঘন যদি ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকে এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, তাহলে শীতকালে বা অসুস্থতার সময় ডাবের পানি এড়িয়ে চলুন।

উচ্চ রক্তচাপে সাবধান:
ডাবের পানি প্রায়ই হৃদরোগের জন্য উপকারী পানীয় হিসেবে প্রচার করা হয়। কেননা, এর উচ্চ পটাশিয়াম উপাদান সোডিয়ামের প্রভাব প্রতিরোধ করে রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যারা রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে ডাবের পানি পান ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে এসিই ইনহিবিটর বা পটাশিয়াম-স্পেয়ারিং ডায়ুরেটিকসে।

এ ওষুধগুলো এরইমধ্যে শরীরে পটাশিয়াম বজায় রাখতে সহায়তা করে। এরমধ্যে যদি ডাবের পানি পান করা হয় তাহলে পটাশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, যা হাইপারক্যালেমিয়া নামে পরিচিত। ফলে বুকব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশী দুর্বলতা বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে নিয়মিত ডাবের পানি পানের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তা না হলে সমস্যা হতে পারে।

ইলেকট্রোলাইট সীমাবদ্ধ ডায়েট:
আপনি যদি ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন, তাহলে ডাবের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। হৃদরোগ বা কিডনির মতো জটিল সমস্যায় কম পটাশিয়াম বা ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডাবের পানি আপনার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মিশ্রণ গ্রহণে সাবধান না হলে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যকে সহজেই বিঘ্ন করতে পারে। ভারসাম্যহীনতার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, পেশীতে খিঁচুনি, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *