রোভার স্কাউট রোহান আহমেদ খানের সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন অসম্পন্নই রয়ে গেল। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রাজধানীর শনির আখড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রোহান চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ৭ বিষয় পরীক্ষা দেওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনে পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।
রোহানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের সদর উপজেলার বালিয়া গ্রামে। ২ ভাইয়ের মধ্যে রোহান ছিল ছোট। রাজধানীর কদমতলীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রোহান।
রোহানের বাবা সুলতান আহমেদ মুদি দোকান ব্যবসায়ী, মা মনিরা বেগম আরবি টিউশান করেন। বড় ভাই রাহাত সায়েদাবাদ আরকে চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের অ্যাকাউন্টিং বিষয়ের শিক্ষার্থী।
রোহানের বাবা সুলতান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ১৯ জুলাই জুমার নামাজ পড়তে আমার বড় ছেলে রাহাত ও ছোট ছেলে রোহান বাসা থেকে বের হয়। বাসার পাশেই বাইতুস সালাম জামে মসজিদে নামাজ আদায় করে দুই ভাই। নামাজ শেষে রাহাত বাসায় চলে আসে। রোহান বাসার নিচেই থেকে যায়।
আর এদিন কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের লোকজনের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। সে দৃশ্য দেখতে গিয়ে বাসার পাশে গোয়ালবাড়ি মোড়ে রোহান গুলিবিদ্ধ হয়।
সুলতান আহমেদ আরও বলেন, আমি, আমার বড় ছেলে রাহাত ও স্ত্রী মিটফোর্ড হাসপাতালে যাই। সেখানে দেখি কলাপসিবল গেটের ভেতরে আমার রোহানের নিথর দেহ পড়ে আছে। ওইদিন লাশ আনতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি জটিলতা ও ময়নাতদন্তের কথা বলে দেয়নি। পরের দিন বিকালে বাসার পাশে বাইতুস সালাম মসজিদের কাছে জানাজা শেষে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রোহানের মা যুগান্তরকে বলেন, আমার কী সুন্দর, নম্র ও ভদ্র ছেলে ছিল। নামাজ পড়ত, লেখাপড়া করত, আজেবাজে কোনো আড্ডা দিত না। আমার ছেলে বলেছে, এইচএসসি পাশ করার পর সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। মানুষের সেবা করবে।
রোহানের এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে তার মা কেঁদে কেঁদে বলেন, ও আল্লাহ, আল্লাহ রে আমার ছেলেকে কে গুলি করে মারল। আল্লাহ তুমি কোথায়।
Leave a Reply