চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ আল্লাহ তাআলার নিদর্শন। এটা আল্লাহ তাআলার নির্ধারণ করা প্রকৃতির নিয়মেই ঘটে। দুনিয়ার কারো জন্ম-মৃত্যু বা বিশেষ কোনো ঘটনার কারণে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ হয় না।
আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত থেকে আগামীকাল সোমবার ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে এক বিরল পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। একইসঙ্গে এটি ‘সুপার ব্লাড মুন’ হিসেবেও পরিচিত, যা সাধারণ চাঁদের চেয়ে আকারে বড় ও উজ্জ্বলতায় বেশি হয়।
চন্দ্রগ্রহণ একটি স্বাভাবিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা হলেও ইসলাম ধর্মে এর রয়েছে গভীর দৃষ্টিভঙ্গি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ আল্লাহর নিদর্শন
নবিজি হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ তাআলার দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুতে এগুলোর গ্রহণ ঘটে না। তাই যখন তোমরা সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ দেখো, তখন আল্লাহকে স্মরণ করো, নামাজ আদায় করো, জিকির করো ও ইস্তিগফার করো।— (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসের পটভূমিতে জানা যায়, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ ঘটে। সাহাবিদের কেউ কেউ মনে করলেন, হয়তো ইবরাহিমের মৃত্যুজনিত কারণে গ্রহণটি ঘটেছে। তখন নবিজি (সা.) স্পষ্টভাবে তা নাকচ করে দেন এবং বলেন, এ ধরনের ঘটনা আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মে ঘটে, কোনো মানুষের জন্ম-মৃত্যু এতে প্রভাব ফেলে না।
চন্দ্রগ্রহণে ইসলামের করণীয় কী?
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ কেবল বিজ্ঞানসম্মত ঘটনা নয়, বরং তা ঈমানদারদের জন্য আত্মবিশ্লেষণ, ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার একটি উপলক্ষ। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের নিয়ে সূর্যগ্রহণে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও জিকিরে ব্যস্ত থাকার উপদেশ দেন।
চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়
নফল নামাজ আদায় (একাকী)
আল্লাহর জিকির
ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
দোয়া ও তাওবা
চন্দ্রগ্রহণের নামাজ: একাকী, মসজিদে সমবেত নয়
চন্দ্রগ্রহণ উপলক্ষে নামাজ আদায় করা সুন্নত। তবে এটি সূর্যগ্রহণের মতো জামাতে নয়, বরং নিজ নিজ ঘরে একাকী আদায় করাই ইসলামি শরিয়তের বিধান। এই নামাজে আজান বা ইকামত নেই।
নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্ধারিত নয়; কেউ দুই রাকাত আদায় করতে পারেন, আবার ইচ্ছা হলে চার, ছয় বা আট রাকাতও পড়া যায়। প্রত্যেক দুই বা চার রাকাত পরপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে, ঠিক অন্যান্য নফল নামাজের মতোই।
কখন দেখা যাবে বাংলাদেশে?
বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী আজ (রোববার) রাত ৯টা ২৮ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে পেনামব্রাল গ্রহণ শুরু হবে, যা-
পেনামব্রাল গ্রহণ শুরু: রাত ৯টা ২৮ মিনিট ২৫ সেকেন্ড
আংশিক গ্রহণ শুরু: রাত ১০টা ২৭ মিনিট ৯ সেকেন্ড
পূর্ণ গ্রহণ শুরু: রাত ১১টা ৩০ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড
সর্বোচ্চ গ্রহণ: রাত ১২টা ১১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড
পূর্ণ গ্রহণ শেষ: রাত ১২টা ৫২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড
আংশিক গ্রহণ শেষ: রাত ১টা ৫৬ মিনিট ৩১ সেকেন্ড
পেনামব্রাল গ্রহণ শেষ: রাত ২টা ৫৫ মিনিট ৮ সেকেন্ড
কুসংস্কার নয়, ঈমানের দৃষ্টিতে দেখুন
ইসলাম চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণকে কোনো অশুভ সংকেত বা কুসংস্কার হিসেবে দেখার অনুমতি দেয় না। বরং এগুলো আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে দেখার এবং এর মাধ্যমে মানুষের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া, আত্মশুদ্ধি ও গোনাহ থেকে মুক্তির জন্য তার কাছে ক্ষমা চাওয়া।
উল্লেখ্য, আজ রাতের আকাশে তাকিয়ে দেখুন প্রকৃতির এই অপূর্ব আয়োজন— ‘সুপার ব্লাড মুন’ বা বিরল পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ।
Leave a Reply