ডাকসু (DUCSU) নির্বাচনে বিজয়ের পর সাদিক কায়েমের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে তাঁকে একজন মধ্যবয়স্ক নারীর সঙ্গে দেখা যায়, যা ঘিরে নানা আলোচনা ও বিতর্ক তৈরি হয়। অনেকে সেটিকে নেতিবাচকভাবে প্রচার করার চেষ্টা করেন। তবে একটি অনুসন্ধানী ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর ওই নারী সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য সামনে আসে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই নারী সাংবাদিক জিনাত তাসরিন—আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সাইরের এক প্রতিবেদনে যাঁকে ‘কনফিডেন্ট’ বা বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি নিরাপত্তা, পরিকল্পনা ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সাইরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় ছাত্রনেতাদের নিরাপদ আশ্রয়, যোগাযোগ, কর্মসূচি নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জিনাত তাসরিন।
তিনি ওহিদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনকারীদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান নিশ্চিত করেন।আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও সাদিক কায়েম নয় দফা দাবি নিজে হাতে লিখে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পৌঁছে দেন।
সাদিক ও অন্যান্য নেতারা যখন লিফলেট বিতরণের পরিকল্পনা করেন, তখন জিনাত সেটিকে সময়োপযোগী নয় বলে বাতিল করতে বলেন এবং বিকল্প কর্মসূচির পরামর্শ দেন।
এমনকি আন্দোলন ধীর করার গোপন চেষ্টার খবর পেয়ে তিনি সাংবাদিক শফিকুল আলমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন।
নির্বাচনে সাদিক কায়েমের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর জিনাত তাসরিন সামাজিক মাধ্যমে একটি আবেগঘন বার্তা লেখেন, যেখানে তিনি তাকে “আমার ছেলে” বলে সম্বোধন করেন। লেখায় তিনি উল্লেখ করেন:“তোমার দারুণ বিজয় দেখে আমি যেন গর্বিত অভিভাবক বোধ করছি… প্রথম দিন থেকেই জানতাম তুমি এক অমূল্য রত্ন… তুমি যেন সবসময় বিনয়ী, সংযমী ও শ্রদ্ধাশীল থেকো।”
এই বার্তাটি প্রকাশের পর ভাইরাল ছবিটি নিয়ে যাবতীয় জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে।
আন্দোলন-ভিত্তিক সংগঠন ‘আব বাংলাদেশ’-এর সদস্য সচিব মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ আরেফিনও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন, যা বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়তা করে।
বলা যায়, অনেক চেষ্টা করেও সাদিক কায়েমের মতো নেতাদের দমিয়ে রাখা যায়নি। বরং সময়ের পরীক্ষায় তাদের নেতৃত্ব, সাহসিকতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা আরও সুস্পষ্টভাবে সামনে এসেছে। আন্দোলনের সময় তাঁর পাশে ছিলেন একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক, যিনি শুধু “কনফিডেন্ট”ই নন, ছিলেন এক নীরব কাণ্ডারি।
Leave a Reply