ভারতের সরকারি সূত্র বলছে বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের ষড়যন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক পক্ষ জড়িত রয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে সরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি।
শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ক্ষেত্রে বড় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে, সহিংসতা-সংকটে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠক থেকে এ তথ্য এসেছে।
সর্বদলীয় বৈঠকে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রশ্ন করেন, গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এ আন্দোলনের নাটকীয় মোড় পরিবর্তনে বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে পাকিস্তানের জড়িত থাকতে পারে কি না?
রাহুলের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের ষড়যন্ত্রে একাধিক রাজনৈতিক পক্ষ জড়িত রয়েছে বলে আমাদের নিকট তথ্য রয়েছে।
দিল্লিতে সর্বদল বৈঠকে এস জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের এ সময়ে ভারতীয় নাগরিকদের পরিস্থিতি এবং সে দিকে নজর রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখনই ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে আনা হচ্ছে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সরকার। প্রয়োজন হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্ভাব্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয়গুলোকে নিয়ে আলোচনা এবং ভারত সরকারের নতুন পদক্ষেপ সম্পর্কে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের অবহিত করেছেন এ বৈঠকে।
সর্বদলীয় বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ভারত এবং বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। শেখ পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে। সেনার নেতৃত্বে সেখানে তদারকি সরকার গঠিত হবে। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রবাসী ভারতীয়দের ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই কেন্দ্রের লক্ষ্য জানান তিনি।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সর্বদল বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত দলই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছে। এ বিষয়ে তারা কেন্দ্রের পাশে থাকবে বলেও জানিয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীও একই অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহিংসতা সম্পর্কে এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।
এদিকে ভারতে আশ্রয়ে থাকা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনা এ মুহূর্তে রয়েছেন দিল্লিতে। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই তাকে বেশ কিছুটা সময় দেওয়া হয়েছে। হাসিনা নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা এখনো ভারত সরকারকে জানাননি। সময় নিয়ে তিনি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ভারত সরকার তার বক্তব্য শুনে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে গত সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানবাহিনী ঘাঁটিতে অবতরণ করেন। তাকে স্বাগত জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।
ভারত থেকে হাসিনা লন্ডনে রওনা হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। তবে যুক্তরাজ্য শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিবে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Leave a Reply