হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বুধবার ফেইসবুকে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া।
শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে দুদিন আগে বার্তা দেওয়ার পর সজীব ওয়াজেদ জয় এখন বলছেন, নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে এ পরিস্থিতিতে তারা হাল ছেড়ে দিতে পারেন না।
হাসিনাপুত্র জয় বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান রেখেছেন।
গত সোমবার গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিনই তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন, তিনি আর রাজনীতিতে ফিরবেন না বলে।
এর দুদিন পরে এসে জয় বলছেন, তার পরিবার রাজনীতিতে ফিরবে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সারা দেশে ভাঙচুর, লুটপাট হচ্ছে। শহরের বাইরে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে, অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
“এই পরিস্থিতিতে আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে পুরাতন, গণতান্ত্রিক ও বড় দল। আওয়ামী লীগ কিন্তু মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। ”
আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুর নাতি জয় বলেন, “আমরা বলেছিলাম যে আমার পরিবার আর রাজনীতি করবে না। তবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে এ পরিস্থিতিতে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না।
“যদি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ছাড়া সম্ভব না। কারণ এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগ কোথাও যাবে না, শেষ হয়ে যাবে না। এটাকে শেষ করা সম্ভব না।”
নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা ঘুরে দাঁড়ান। আপনারা একা না, আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। আমরা আপনাদের সাথে আছি। দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের রক্ষা করার জন্য যা প্রয়োজন তা করতে আমরা প্রস্তুত।”
আলোচনা করতে প্রস্তুত জানিয়ে জয় বলেন, “বর্তমানে যারাই আছে ক্ষমতায়, তাদের বলব- আমরাও একটি গণতান্ত্রিক, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই- জঙ্গিবাদ মুক্ত। তার জন্য আমরা সবার সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুত। শুধুমাত্র তারা যদি জঙ্গিবাদ ও ভায়োলেন্স বাদ দেয়।”
দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা সেখান থেকে কোন দেশে যাবেন, তা সে বিষয়ে এখনও কোনো পরিষ্কার বক্তব্য আসেনি তার পরিবার বা দলের পক্ষ থেকে। অবশ্য তিনি যে ভারতে বেশি দিন থাকতে পারছেন না, সে ইঙ্গিত দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় শেখ হাসিনার পক্ষে দলের জন্য কাজ করা বা তার পরিবারের পক্ষে আওয়ামী লীগের হাল ধরার বিষয়টি কতটা বাস্তবতসম্মত সে প্রশ্ন সামনে আসার মধ্যেই সজীব ওয়াজেদ বলছেন, তারা হাল ছেড়ে দেবেন না।
“শেখ হাসিনা মরে যাননি। আমরা কোথাও যাইনি। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া গণতন্ত্র, নির্বাচন সম্ভব না।”
ভিডিও বার্তার সঙ্গে দেওয়া স্ট্যাটাসে জয় বলেন, “সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, যেভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে, এই অবস্থায় আমরা বসে থাকতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর পরিবার বাংলাদেশের মানুষের সাথে আছে।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে সরকার পতনের একদফায় রূপ নেয়।
এই আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে সহিংসতা প্রাণ গেছে অন্তত ৩০০ মানুষের। শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দিনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় আরও প্রাণহানি হয়েছে।
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের বেশিরভাগ সময় তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয়।
শেখ হাসিনার পতনের দিন সোমবার ধারণকৃত ভিডিও বার্তায় জয় তার ভাষায় কোটা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করার বলেছিলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, আমরা আন্দোলন করেছি, আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, আন্দোলন করে দেশের উন্নয়ন করেছি।
আপনারা যে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বলছেন, আজকে শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ এতদূর আসতে পারত? অসম্ভব কেউ, কল্পনা করতে পারে নাই, যে বাংলাদেশ এরকম উন্নতি করবে, এ রকম উন্নয়ন হবে।”
এরপরই জয় হতাশ মুখে বলেন, “ঠিক আছে; শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে, সেটা আমারও চিন্তার বিষয় না, আমার-আমাদের পরিবারেরও আর চিন্তার বিষয় না; আপনারা বুঝবেন।
“তবে এভাবে সংঘর্ষ করে, হত্যাকাণ্ড করে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। ”
ভিডিও বার্তায় এরপর জয় বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
এদিকে শেখ হাসিনার পতনের দিন সারা দেশে উল্লাসে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। একই সঙ্গে চলে নতুন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বিভিন্ন দলের রাজনীতি ও আন্দোলন সমর্থনকারী বিশিষ্টজনের বৈঠকের পর বঙ্গভবন থেকে বলা হয়েছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দায় শেখ হাসিনার। সরকার পতনের পর দেশে যে নৈরাজ্য চলছে, তা তারই শাসনের ধারাবাহিকতা।
গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার মধ্য দিয়ে নতুন দেশের যাত্রা শুরু হবে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার কথা ড. ইউনূসের। এ দিন রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ নেওয়ার কথা।
Leave a Reply