নির্বাচন কবে? জবাবে যা এলো!

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তবে উপদেষ্টারা সময় নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দুই জন প্রতিনিধি আছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে, সেই সরকার কত দিনে নির্বাচন দেবে, এই প্রশ্নে জবাব এসেছে আগে দরকার সংস্কার, পরে নির্বাচন।

টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসন শেষে গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর বৃহস্পতিবার নতুন যে সরকার শপথ নিয়েছে, তাকে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ১৬ জন, যদিও আপাতত শপথ নিয়েছেন ১৩ জন, তিনজন ঢাকায় নেই, তারা পরে শপথ নেবেন।

শপথ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন কয়েকজন উপদেষ্টা, সেখানে সরকারের মেয়াদ সংক্রান্ত প্রশ্নে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ‘সংস্কার’, ‘রাষ্ট্র রূপান্তর’ এর কথা বলেন তারা।

সরকার পতনের ডাক দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক থেকে দেশ পরিচালনার উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পাওয়া নাহিদ ইসলাম দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে বলেন, “অবশ্যই, এই অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা। তবে বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ অনেকদিন ধরে ‘ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত’। ফলে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে এ সরকার কাজ করবে। কিন্তু তার আগে নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার করা। না হলে জনগণের অধিকার লঙ্ঘন হবে।”

সরকারের অগ্রাধিকার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত রেজিমে (সরকারের মেয়াদে) যারা গুম, খুন, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করা এবং ইমিডিয়েটলি আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জন দুর্ভোগ দূর করা। এই কাজগুলো এ সরকারে প্রথম কাজ হবে।

“আমরা বলেছিলাম যে, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজটি করতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কার কাজটি করতে হবে। পুরো বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে হবে। যেমন সরকারে ভেতর ছাত্রদের নেতৃত্ব থাকবে, সকল কাজেও আমাদের উপস্থিতি থাকবে। সামগ্রিকভাবে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে নিজেদের কাজে লাগাব।”

সংবিধান কী বলে

সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা সম্ভব না হলে পরের ৯০ দিনের মধ্যে তা করতে হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন গত ৬ অগাস্ট। তার আগের দিন বঙ্গভবনে গিয়ে দেখা করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবনায় যে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের চিন্তা নেই, সেটি আগেই বোঝা যাচ্ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই সরকারের মেয়াদ তিন বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে।

সংসদ ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী চলা যায়নি। সংসদ ভেঙে দিতে হলে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ করতে হয়। আবার তিনি তখনই সংসদ ভাঙবেন, যখন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করার পরও সংসদ নতুন কাউকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার মত অবস্থায় না থাকে।

নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের কথা, কিন্তু সেটিও সম্ভব হয়নি। কারণ, শেখ হাসিনা দেশেই ছিলেন না। পরে রাষ্ট্রপতি তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করে সংসদ ভেঙেছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আইনি ব্যাখ্যা অবশ্য এখনো দেওয়া হয়নি।

‘সরকারকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে’

নতুন সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “সকলের সম্মতিতে একটি সরকার গঠন করতে পেরেছি বলে মনে করি, যেটি সারাদেশের জনগণকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে।

“এ সরকারের যিনি প্রধান উপদেষ্টা, তিনি হচ্ছেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেক্ষেত্রে এ সরকার বাংলাদেশে নতুন ধাঁচে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারব প্রত্যাশা করি।”

সরকারে নতুনত্ব রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এ সরকার তেমনই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবে বলে মনে করি আমরা।”

শিক্ষা খাতের চ্যালেঞ্জ ও দুর্নীতি প্রশ্নে আসিফ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, যিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন, আমরা তার সাথে কথা বলে, তার সাথে বসে কমিটমেন্টগুলো সর্বপ্রথম পূরণ করব।

“এছাড়া আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অনেক কোয়েশ্চেন আছে, যিনি এ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরু দায়িত্ব পাবেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর পক্ষ থেকে তার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের যে দাবিগুলো রয়েছে, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট রয়েছে সেগুলো পূরণে দ্রুত সচেষ্ট হব।”

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “দেখুন এটি একটি পলিসিগত বিষয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা রিসার্চ টিম করে এ ব্যাপারটার একটা কাঠামোগত এবং ভালো সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।

“আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকটিভিজম করতে গিয়ে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির খারাপ দিক দেখেছি, আমাদের আন্দোলনেও ছাত্রলীগ তার জাতীয় সংগঠনের স্বার্থ বাস্তবায়নে হামলা করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সেই লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিলাম, কিন্তু বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করব একটি সুষ্ঠু, খুব ভালোভাবে রিসার্চ করার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির… এ বিষয়টি কীভাবে চূড়ান্ত সমাধান করার দিকে নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা পলিসি নেওয়ার চেষ্টা করব।”

আরেক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আজকে তারা (তরুণরা) নিজেদের প্রাসঙ্গিক প্রমাণ করেছে। আমি আশা করব, নিশ্চয় তারাই দায়িত্ব এক সময় না এক সময় নেবে এবং বলেই তো, আজকের তরুণ আগামী দিনের নেতা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *