শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবি!

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, দীর্ঘবছর আটকে থাকা মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে উল্লেখ করে শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরী ওসমানকে দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ‌্যায় চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে আয়োজিত ত্বকীসহ নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এই সময় ওসমান পরিবারের সদস্যদের হাতে হত্যার শিকার হওয়া ত্বকী ছাড়াও আরও চারটি পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রফিউর রাব্বি বলেন, তিনদিন আগে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এখন পর্যন্ত পরবর্তী কোনো সরকার গঠিত হয় নাই। বলতে গেলে এই তিনদিন শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি আছেন, সরকারবিহীন একটা পরিস্থিতি চলছে। যার ফলে বিভিন্ন জায়গায় অরাজকতা আমরা লক্ষ্য করছি। বৃহৎ একটি পরিবর্তনের পরে বিভিন্ন দেশে দেশে হঠাৎ করে যেভাবে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুদিন সময় লাগে। ব্যাপারটিকে আমরা সেভাবে দেখতে চাই।

নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার জগদ্দল পাথরের মতো শহরবাসীর ঘাড়ে চেপে বসেছিল উল্লেখ করে রাব্বি বলেন, এই পরিবারটাকে নৃশংস সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করেছে প্রশাসন ও সরকার। এই ওসমান পরিবার তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে পরিবহন, হাট, ঘাট থেকে শুরু করে ট্রাক স্ট্যান্ড, বালুমহাল, পাথর ইত্যাদি দখল করেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দখল করেছে তারা। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে তারা কোনো নির্বাচন হতে দেয়নি, লুটপাট করেছে। মাদকের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল। এর ভাগিদার হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার বিভিন্ন সময় যে ভূমিকা রেখেছে তা জনগণের বিপক্ষে গিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেই আজমেরী ওসমান ত্বকীসহ অনেককে খুন করেছে। সেই আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার তো দূরের কথা বিভিন্নভাবে পুলিশ-প্রশাসন তাকে সহযোগিতা করেছে। শামীম ওসমান পরিবারসহ এখনও পালাতে পারেনি বলে জেনেছি। তাদের যেন পালাতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে পরবর্তী সমস্ত দায়দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে। কারণ যে শেখ হাসিনা অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের খুনি হিসেবে পরিচিত, চিহ্নিত, তাকে আপনারা ইতোমধ্যে দেশ থেকে পালানোর সুযোগ দিয়ে অপরাধ ও জঘন্য অন্যায় করেছেন। তাকে শাস্তির আওতায় আনা থেকে আপনারা বিরত রেখেছেন। তাই আপনাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, আপনারা পরবর্তীতে যা করবেন হিসাব করে করবেন। জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো অবস্থান গ্রহণ করবেন না।

আওয়ামী লীগ ও ওসমান পরিবারের দখলে থাকা খাতগুলো বিএনপির লোকজন দখল করছে অভিযোগ তুলে তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এদেরকে সামাল দেন। শেখ হাসিনার পরিণতি দেখেন। আবার বাংলাদেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। কেউ কেউ মনে করতে পারেন, হাসিনা সরকারের পতনের সাথে সাথে এইটা হয়তোবা পাকিস্তান, আফগানিস্তানের ধারায় আরেকটা মুসলিম দেশ হয়ে যাবে। বোকার রাজ্যে বসবাস করবেন না। এই চব্বিশের গণঅভূত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন চাই। এই দেশটি আপমার জনতার দেশ হবে, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলের বাংলাদেশ হবে। এই দেশে মসজিদ নিরাপদে থাকবে, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা, মাজার, ভাস্কর্য, হাজার বছরের সংস্কৃতি সকল কিছু নিরাপদে থাকবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহিদেরা, চব্বিশের শহিদেরা নিরাপদে থাকবেন। এইটা আমাদের প্রত্যয়।

ওসমান পরিবারের লোকজনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্র হাতে তাদের মহড়ার কারণে মামলা রুজুরও দাবিও জানান ত্বকীর বাবা।

সামনে যাদের ছবি দেখছেন সেই আশিক, চঞ্চল, ভুলু, মিঠু এদেরকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ওসমান পরিবারের কারোর নাম উল্লেখ করতে দেয়নি পুলিশ। পরে মামলাগুলো আর আলোর মুখ দেখে নাই। দায়সারা চার্জশিট দিয়ে আসল অপরাধীদের আড়াল করা হয়েছে। ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্রে আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের নাম আসলেও নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, সরাসরি জড়িত অয়নের নাম আসেনি। র‌্যাব জানিয়েছিল, তাদের নাম দিলে মামলা আর আগানো যাবে না। শেখ হাসিনা সরকার এই বিচারও বন্ধ রেখেছিল।

শামীম ওসমান ও অয়ন ওসমানসহ সমস্ত নাম স্পষ্টভাবে চার্জশিটে আসতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ত্বকীকে টর্চার সেলে নেয়া হয় রাত ৯টার সময়। ছয়টা থেকে নয়টা এই সময়টিতে ত্বকী কোথায় ছিল তা স্পষ্ট করতে হবে। এখন যেই সরকার গঠিত হবে সেই সরকার যেন ত্বকী, আশিক, চঞ্চল, ভুল, মিঠু হত্যা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে। এছাড়া সাগর-রুনি, তনুসহ সকল মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার নামাজের পর মুসুল্লির একটি অংশ চারুকলায় যাবে বলে শুনেছি। আমি জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু এইখান থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করবেন না। মন্দিরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে আপনারা পাহারা বসিয়েছেন, সম্প্রীতির জন্য এই ভূমিকাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত হানলে আমরা বরদাশত করবো না। কেউ হাতির পাঁচ পা দেখবেন না।

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় এই সময় আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, ভবানী শংকর রায়, বাসদের সমন্বয়কারী নিখিল দাস, মহিলা পরিষদের রিনা আহমেদ, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *