শেখ হাসিনা কবে দেশে ফিরবেন জানালেন : সজীব ওয়াজেদ জয়

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে’ দেশে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে দায়ী করেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন জয়।

প্রবাসে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।

তবে একজন অবসরপ্রাপ্ত বা সক্রিয় রাজনীতিক হিসেবে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
জয় জোর দিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কখনোই বাংলাদেশের মানুষ এবং বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগকে ছেড়ে যাবে না।’

শেখ হাসিনাকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান জয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি এবং চাপ প্রয়োগ করতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘এটা সত্যি যে আমি বলেছিলাম শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরবেন না। কিন্তু সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর ক্রমাগত হামলার পর গত দুই দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিরাপদে রাখতে যা যা করা দরকার, আমরা তা-ই করব। আমরা তাদের একা ছেড়ে দেব না।


শেখ হাসিনার একমাত্র ছেলে আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও পুরনো রাজনৈতিক দল। তাই আমরা আমাদের জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে পারি না। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে তিনি (শেখ হাসিনা) অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।’

আওয়ামী লীগকে ভারতের ‘সব সময়ের বন্ধু’ উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে হবে।’

বাংলাদেশের সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, ‘বাংলাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং এই অঞ্চলের দ্বিতীয় আফগানিস্তানে পরিণত হচ্ছে।


দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে নির্বাচন আয়োজন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জয়।

জয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কখনো প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র চলতে পারে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, তিনি বলেছেন, তিনি ঐক্যের সরকার চান, সামনে এগিয়ে যেতে চান এবং অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি চান না। আশা করি তিনি তাঁর কথায় অবিচল থাকবেন।’

জয় আরো বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ক্ষমতায় আসবে এবং মুজিব পরিবার ও শেখ হাসিনা পাশে থাকবে। তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফিরতে চান। প্রশ্ন হলো তিনি কখন ফিরবেন।

বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বা তিনি নিজে রাজনীতিতে আসবেন কি না, জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে জয় বলেন, ‘এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর আমি দিতে পারব না। তবে বাংলাদেশকে বাঁচাতে এবং আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, আমি তা-ই করব।’

সিআইএর মতো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এর সঙ্গে জড়িত কি না, জানতে চাইলে জয় বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে তাদের সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে। তবে চীনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নাকচ করে দেন তিনি।

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী প্রচারণা সম্পর্কে জয় বলেন, ‘ভারতবিরোধী শক্তি এরই মধ্যে খুব সক্রিয় এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে থাকায় আইএসআই এখন ভারতবিরোধী শক্তিকে সহায়তা করতে পারে।’

জয় বলেন, ‘ভারতবিরোধী পক্ষ আরো শক্তিশালী হওয়ার আগেই ভারতকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

শেখ হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা বিষয়ে

এদিকে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের কাছে আর কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।’

অন্যদিকে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেছেন, ‘ভালোবাসার দেশে প্রাণহানির ঘটনায় আমার হূদয় ভেঙে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে এমন কঠিন সময়ে মায়ের পাশে থাকতে না পারায় এবং মাকে জড়িয়ে ধরতে না পারায় মনটা ভেঙে যাচ্ছে।’

সায়মা ওয়াজেদ জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

সূত্র : দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *