আন্দোলনে কতজন মারা গেছেন, জানালেন সাখাওয়াত হোসেন!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন।

৪৫ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকারে নর্থইস্ট নিউজকে তিনি এ তথ্য দেন। গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাখাওয়াত হোসেন ইতোমধ্যেই সহিংসতার বিষয়ে নিবিড় তদন্ত শুরু করেছেন।

নর্থইস্ট নিউজকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায় জনতার ওপর যাদের বেশিরভাগই ছাত্র এবং যুবক ছিল তৎকালীন শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী গুলি চালায় অথবা প্রাণঘাতি অস্ত্র দিয়ে হামলা করে।’

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ১৫ আগস্ট নর্থইস্ট নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের উপর প্রথম মনোনিবেশ করেছে, যারা ভারত এবং অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’

শীর্ষ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ের নেতাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে তারা বিশেষত তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আলী আরাফাত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে খুঁজে বের করতে বেশি আগ্রহী। একটি সূত্র জানিয়েছে , ‘আগে ধারণা করা হয়েছিল হাছানকে সেনাবাহিনী আটক করেছে। তাকে এখনো পাওয়া যায়নি। সে কোথাও লুকিয়ে আছে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগের শাসনামলের অর্ধেক নেতাকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে নয়াদিল্লি পালিয়ে যান। হোসেন বলছেন, ‘একজন ‘মেগালোম্যানিয়াক’ হিসাবে হাসিনা একটি অত্যাচারী রাজত্বের সভাপতিত্ব করে গেছেন এবং মানুষের জীবন নিয়ে তিনি বিশেষ মাথা ঘামাতেন না।

তার মন্ত্রিপরিষদের কিছু মন্ত্রী যেমন আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), আনিসুল হক (আইন) এবং ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) এবং বেশ কিছু সিনিয়র পুলিশ অফিসার এই হত্যা যন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল’। কামাল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২,০০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন এই তথ্য প্রকাশ করে সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন যে, তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আওয়ামী লীগ দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বুকে ঘটে যাওয়া খুন, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনার ব্যাপক তদন্ত শুরু হবে ১৪ আগস্ট থেকে। এই তদন্তগুলো হবে ১৯৪৫-পরবর্তী জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রায়ালের আদলে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তিনি বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সে কথা উল্লেখ করে হোসেন বলেন, ‘তাদের শান্ত করতে আমার পাঁচ ঘণ্টা একটানা আলোচনা চালাতে হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম হাসিনার শাসনামলে কাদের হত্যা করা হয়েছে এবং কার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড চলেছে। অফিসারদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা আজ অনুশোচনায় ভুগছেন এবং আমার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।’

সাখাওয়াত হোসেনের অধীনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীর ইউনিফর্ম এবং প্রতীক পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের প্রয়োজন হবে, আশা করি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা চলে আসবে।’

ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ঠিক করবে পুলিশ বাহিনীকে কীভাবে পরিচালনা করা হবে। উপদেষ্টা হোসেনের মতে ‘কাজটি কঠিন হবে। বেশ কিছু অফিসারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় লিপ্ত এবং বদলি-পোস্টিং র‌্যাকেট চালিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করত। তদন্ত শেষ হলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’

ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারী এবং শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত’। একথা উল্লেখ করে হোসেন বলেন, ‘ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের কাছে তার বার্তা হলো- আপনি কি ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ না শত্রু সরকার চান? কারণ যে দেশ পরাশক্তি হতে চায়, তাকে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা কেউ টুকরে টুকরে গ্যাং নই’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *