বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যেই নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও শক্তি অর্জন করে শুক্রবার রাতেই গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে নিম্নচাপটি।
নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে শনিবার (২৫ মে) ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘রেমাল’। এখন পর্যন্ত আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের মধ্যে। ইতোমধ্যে এর ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) রাতে আবহাওয়ার তিন নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে নিম্নচাপটির অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান শুক্রবার (২৪ মে) জানিয়েছেন, নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রূপ নেয়ার পর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রমের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে মূলত খুলনা বিভাগ পড়ে। বাতাসের শক্তি নিয়ে এটি তীব্র ঘূর্ণিঝড় (৮৯ কি.মি.) বেগে উপকূল পাড়ি দিতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার পর এর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুতি
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলোতে জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি আগাম প্রস্তুতি সভা করেছে। সভায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় ১৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহারের উপযোগী করা হচ্ছে। এছাড়া জরুরি কাজে অংশগ্রহণের জন্য ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জরুরি ত্রাণকার্যে ব্যবহারের জন্য পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা মজুত রয়েছে।
উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটেও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫১ জন মানুষ ছাড়াও গবাদি পশু আশ্রয় নিতে পারবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া নগদ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা এবং ৬৪৩.৪ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। ডিসি জানান, জেলা ব্যাপী সিপিপির তিন হাজার ১৮০ জন সদস্য এবং রেডক্রিসেন্ট, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রায় ৫০০ সদস্য প্রস্তত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের সংকেতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘রেমাল’ মোকাবিলায় বরগুনায় সচেতনতামূলক মাইকিং করেছেন কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। শুক্রবার (২৪ মে) বিকেল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ প্রচার মাইকিং করা হয়।
কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম ফিরোজ্জামানের নেতৃত্বে পাথরঘাটা পৌর শহরের লঞ্চঘাট, নিলিমা পয়েন্টসহ উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার মাইকিং করেন কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
Leave a Reply